এই ডায়েরীতে কিউবার বিপ্লব  এবং তার সঙ্গে গেরিলা আন্দোলনের সম্পর্কের কথা বারবার উল্লেখ রয়েছে । এ-কারনে কেউ কেউ বলতে  পারেন আমাদের পক্ষে এই ডায়েরী প্রকাশ করা প্ররোচনামূলক কাজ হবে । বিপ্লবের শত্রুদের ওজর সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়া হবে । ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের গোষ্ঠী , লাতিন আমেরিকান শাসকচক্র কিউবাকে অবরোধ করা,বিচ্ছিন্ন করা, এমনকি আক্রমণ করার জন্য তাদের পরিকল্পনাকে আরো জোরালো করার অজুহাত পাবে ।
যারা এইরূপ চিন্তা করেন তাদের মনে রাখা দরকার যে পৃথিবীর কোন প্রান্তে শয়তানি কাজ করতে ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদের অজুহাতের প্রয়োজন হয়নি । যেদিন থেকে আমাদের দেশে বিপ্লবের বিধান জারী হয়েছে, সেদিন থেকেই ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদ কিউবার বিপ্লবকে গুড়িয়ে দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এর সুস্পষ্ট এবং সুপরিচিত কারন সকলের জানা আছে । তা হল এই যে, সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বের সশস্ত্র পুলিশবাহিনী, প্রতি-বিপ্লবের ধারাবাহিক উস্কানিদাতা এবং সর্বাধিক পশ্চাদগামী ও অমানবিক সমাজ ব্যবস্থার রক্ষক ।

বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে অরা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু তা কখনো ইয়াঙ্কি আক্রমনের  কারন হবে না । অজর-আপত্তির সুযোগ বন্ধ করার জন্য সংহতিকে অস্বীকার করা উটপাখির “বালিতে মাথা” লুকানোর রাজনীতি । সমসাময়িক সামাজিক বিপ্লবের আন্তর্জাতিক চরিত্রের সাথে তার কোন যোগ নেই । বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে সংহতি ছিন্ন করে ওজর-আপত্তির পথ বন্ধ করা যায় না; বাস্তবিকপক্ষে এতে বরং বোঝায় ইয়াঙ্কি সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সহযোগিতা । তাদের আধিপত্য ও দাসত্বের নীতিকে মেনে নেওয়া ।
কিউবা অর্থনৈতিক দিক থেকে অনগ্রসর একটি ছোট দেশ । সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশের দ্বারা একই রকমে শাসিত ও শোষিত দেশগুলির মতো । আমেরিকার উপকূল থেকে এদেশের দূরত্ব মাত্র ৯০ মাইল । এই দেশের সীমানার মধ্যেই একটি মার্কিন নৌঘাঁটি রয়েছে । অর্থনৈতিক ো সামাজিক বিকাশ সাধনের পথে বাধা এর অসংখ্য । বিপ্লবে সাফল্যের পর থেকে ভয়ঙ্কর বিপদের আশঙ্কা এর সামনে দেখা দিয়েছে; অনবরত হুমকি এসেছে । কিন্তু এসব সাম্রাজ্যবাদ আমাদের অবনত করতে পারবে না । পরবর্তী বিপ্লবী কার্যক্রম গ্রহন করার ব্যাপারেও এই বাধাকে আমরা গ্রাহ্য করি না ।
বিপ্লবী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে চে-র বলিভিয়ার ডায়েরী প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই । চে-র ডায়েরিটি বারিয়েন্তোসের হাতে পড়েছিল । সে তাড়াতাড়ি ডায়েরীর কপি আমেরিকান সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, পেন্টাগন এবং মার্কিন সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেয় । সি আই এ-র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকগণকে বলিভিয়ার দলিলপত্রাদি দেখাবার এবং ফটোস্ট্যাটিক কপি নেবার সুযোগ দেওয়া হয়  । তবে তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল যে আপাতত এসব এরা প্রকাশ করবে না ।

( চে গুয়েভারার ডায়েরী থেকে… চলবে )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে