জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালকে সাধারণ জনগণ এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগ হিসেবে উদযাপন করবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ সন্ধ্যায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভায় বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপনের মধ্যদিয়ে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। আমরা পুরো এক বছরের জন্য আমাদের কর্মসূচিকে ঢেলে সাজাবো।’
জাতি, ধর্ম, বর্ণ. গোত্র, নির্বিশেষে সকল বয়সের শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে মুজিববর্ষ উদযাপিত হবে বলে সন্ধ্যায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের নবনির্মিত কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই যৌথ সভায় তিনি জানান।
সকল জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও যেমন সম্পৃক্ত করবো, তেমনি দেশের জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবীরাও থাকবেন। পাশাপাশি সরকারিভাবেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কেবিনেট সচিবকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
এই কর্মসূচির মধ্যে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, স্কুলভিত্তিক খেলাধূলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নাটক, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা থাকবে এবং কামার, কুমার, জেলে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু সারাজীবন কাজ করেছেন তাদেরও কর্মসূচি থাকবে।
এ উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন এবং কর্ম নিয়ে বেশ কিছু বইও প্রকাশিত হবে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির পিতার স্বাধীকার আন্দোলন এবং দেশের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিহাস জানার জন্য, প্রজন্মের গবেষণায় এগুলো একটি সম্পদ হবে।’ ‘কারাগারের রোজ নামচা’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’- তাঁর ডায়রী ভিত্তিক লেখা দুটি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণের ওপর লেখা একটি বইয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে বের করতে যাওয়া প্রায় ৯ হাজার পৃষ্ঠার প্রকাশনার ১৪টি ভলিউমের প্রথম ভলিউম ছাপারও কাজ চলছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি নিয়েও কয়েক খন্ডের বই প্রকাশিত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখনী ‘স্মৃতিকথা’ও পরবর্তী সময়ে প্রকাশ করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বহুমুখী কর্মসূচির মধ্যদিয়েই আমরা পুরো বছর উদযাপন করবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং বলেছিলেন রক্ত দিয়েই তিনি রক্তঋণ শোধ করে যাবেন, তিনি তা করে গেছেন। এখন আমাদেরও সেই রক্তঋণ শোধ করতে হবে। আর তাঁর আত্মা শান্তি পাবে তখনই যখন বাংলাদেশের মানুষ সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন-যাপন করবে।
বাংলাদেশে আর ক্ষুধাতাড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠী নেই উল্লেখ করে তিনি রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এখন শুধু নিজেদের নয়, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিয়ে তাদের খাদ্যসহ সব রকমের সহযোগিতা দিতে পারছি।
তিনি বলেন, আমরা নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে পারছি, শোষিতের পক্ষে রয়েছি। যে কথা জাতিসংঘে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা তাঁর প্রথম বাংলায় প্রদত্ত ভাষণে বলেন- ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে।’
দেশে একটা মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না, কেউ আর গৃহহীন থাকবে না, আমরা একটি টিনের ঘর হলেও তাদের করে দেবো। তাছাড়া দেশে এখন আর কুঁড়ে ঘর দেখতে পাওয়া যায়না এবং দেশে ২ লাখ ৮০ হাজার গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কর্মসূচি শুধু শহরভিত্তিক নয়, তৃণমূল পর্যায়েও কর্মসূচির বাস্তবায়ন চলছে। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে গ্রামের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এবং সেটাই আমরা করছি।
তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানের প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে তাঁর সরকার ২০ হাজার মেগাওয়াট করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন প্রায় পূরণের পথে রয়েছে।
দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
বাসস