চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্তে ১৪ নভেম্বর রাতে লিমার প্রেসিডেন্ট ভবনে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে যৌথভাবে চ্যাঙ্কে বন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সি চিন পিং এবং বোলুয়ার্তে দুই দেশের পরিবহন বিভাগের প্রধানদের তৈরি রিপোর্ট শোনেন এবং একসাথে চ্যাঙ্কে বন্দর প্রকল্পের ভিডিও দেখেন। প্রকল্প সাইটে চীন এবং পেরুর প্রতিনিধিরা বন্দর উদ্বোধন কাজ শুরুর জন্য দুই প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে নির্দেশনা চান। দুই প্রেসিডেন্ট আদেশ জারি করেন, ‘বন্দর চালু করুন!’

সি চিন পিং চ্যাঙ্কে বন্দরের সফল উদ্বোধনে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং মহামারীর অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠে একসাথে কাজ করার এবং গুণমান ও পরিমাণে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য দুই দেশের নির্মাতাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সি চিন পিং বলেন, মাত্র কয়েক বছরে, একটি আধুনিক বন্দর যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা অনুপ্রেরণাদায়ক। বন্দরটি কেবল একটি গভীর-সমুদ্র বন্দর নয়, দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম স্মার্ট বন্দর এবং একইসঙ্গে সবুজ বন্দরও। এটি পেরুর জন্য বিশাল সুবিধা নিয়ে আসবে, বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, কার্যকরভাবে স্থল ও সমুদ্রকে সংযুক্ত করবে এবং এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকাকে সংযুক্ত করবে, যা পেরুর মর্যাদাকে সুসংহত করবে। ২০০০ বছরেরও বেশি আগে, চীনা জাতির পূর্বপুরুষরা উত্তাল ঢেউ পেরিয়ে যাত্রা করেছিলেন এবং পূর্ব ও পশ্চিমকে সংযোগকারী মেরিটাইম সিল্ক রোড তৈরি করেছিলেন। ৫০০ বছরেরও বেশি আগে, পেরুর পূর্বপুরুষ, ইনকারা কষ্ট এবং বিপদে ভীত না হয়ে পাহাড়ের উপরে উঠেছিলেন এবং আন্দিজের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত ইনকা ট্রেইল তৈরি করেছিলেন। আজ, চ্যাঙ্কে বন্দরটি ‘নতুন যুগে ইনকা ট্রেইল’-এর একটি নতুন সূচনা পয়েন্ট হয়ে উঠছে। চ্যাঙ্কে থেকে শাংহাই পর্যন্ত, আমরা যা প্রত্যক্ষ করছি, তা হল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের যৌথ নির্মাণ শুধুমাত্র পেরুতে শিকড় ও ফুল ফোটানো নয়, নতুন যুগে একটি নতুন এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার স্থল-সমুদ্র করিডোরের জন্মও দিয়েছে।

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চ্যাঙ্কে বন্দরকে ভালভাবে নির্মাণ ও পরিচালনা করতে এবং পরিবহন ক্ষমতা ও ব্যাপক পরিষেবার স্তরকে ক্রমাগত উন্নত করতে আমাদের অবশ্যই একসাথে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘সক্রিয়ভাবে চ্যানেলের মাধ্যমে লজিস্টিক উন্নয়ন, এবং আর্থ-বাণিজ্যের মাধ্যমে শিল্প উন্নয়ন অন্বেষণ করা উচিত্। যৌথ আলোচনা, নির্মাণ ও সমন্বিত নীতিতে অবিচল থাকতে হবে। চীন ও পেরুসহ প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় অর্থনৈতিক সত্তাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে, ফলে আরো বিস্তৃত স্থানে পারস্পরিক সুবিধা এবং জয়-জয় ফলাফল অর্জন করা এবং সমস্ত দেশের মানুষের জন্য আরও বাস্তব লাভ এবং সন্তুষ্টি নিয়ে আসা যাবে।

বোলুয়ার্তে বলেছেন যে, চ্যাঙ্কে বন্দরের উদ্বোধন একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত যার জন্য সমস্ত পেরুর জনগণ গর্বিত। পেরু এবং চীন দ্বারা যৌথভাবে নির্মিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের এই বিশাল প্রকল্পটি পেরুকে একটি আন্তর্জাতিক শিপিং এবং বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করে, এটি পেরুকে ল্যাটিন আমেরিকা এবং এশিয়াকে সংযুক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হতে সাহায্য করবে। ল্যাটিন আমেরিকার একীকরণ এবং এর সমৃদ্ধি উন্নয়নকে শক্তিশালী করে তুলবে। বন্দরটি পেরুর অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করবে, পেরুর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াবে এবং দেশের জনগণের জন্য আরও সুবিধা নিয়ে আসবে। পেরুকে আস্থায় রাখা এবং সমর্থন করার জন্য চীনের প্রতি কৃতজ্ঞ পেরু। ‘চ্যাঙ্কে থেকে শাংহাই পর্যন্ত’, এই ‘নতুন যুগে ইনকা রোড’ সভ্যতার দুটি প্রাচীন দেশের মধ্যে বিনিময়ের সেতু এবং দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ জাতির মধ্যে বন্ধুত্বের সেতু তৈরি করবে। চীন দীর্ঘজীবী হোক! পেরু ও চীনের বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক!

চ্যাঙ্কে বন্দরটি পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, এটি চীন এবং পেরুর যৌথভাবে নির্মিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের’ একটি মূল প্রকল্প। বন্দরটি চালুর পরে, চীন এবং পেরুর মধ্যে একমুখী শিপিং সময় ২৩ দিনে কমানো যাবে এবং ২০ শতাংশেরও বেশি লজিস্টিক খরচ সাশ্রয় করা যাবে। প্রতি বছর এ বন্দর পেরুতে ৮ হাজার সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।

সূত্র: লিলি-হাশিম-তুহিনা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।। বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে