আসাদুজ্জামান সর্দারঃ সাতক্ষীরার দেবহাটায় বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা নির্ধারণকারী ইছামতী নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়। শনিবার দিবাগত রাত থেকে এটি তীব্র আকার ধারণ করে। বর্তমানে দেবহাটা উপজেলার ভাতশালা, কোমরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধের কিছু অংশ নদীগর্ভে ধসে পড়েছে। দ্রুততম সময়ের ভিতরে বাঁধ সংস্কার করা সম্ভব না হলে প্লাবিত হতে পারে ভাতশালা, কোমরপুর, নাংলা, সুশীলগাতিসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা। এতে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী এলাকার হাজারও পরিবার।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইছামতী নদী ভাঙনের কারণে বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে নদীটি। এতে করে পাল্টে যাচ্ছে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র। তাদের দাবি, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অংশের কয়েক হাজার বিঘা জমি ইছামতী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় অংশে জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠেছে হোটেল-পার্কসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতেকরে ইছামতী নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি, কবরস্থানসহ জমিজমা হারাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার দক্ষিণ সীমান্তদিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদী সদর উপজেলার হাড়দ্দহা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার পানিতর এলাকা থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্ত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীর বাংলাদেশ অংশের ৮-১০টি স্থানে ভাঙছে। ইতিমধ্যে দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপরীতে ভারতের অংশে জেগে উঠছে চর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পর বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভাজনকারী সীমান্তের ইছামতী নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন দেবহাটার ভাতশালা বিশ্বাস পাড়া, কোমরপুর, সুশীলগাতি, বসন্তপুর ও নাংলাসহ ইছামতী নদীর বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট বড় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধের কিছু কিছু অংশ নদীগর্ভে ধ্বসে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বেড়িবাঁধের এসব অংশে ক্রমশ ফাটলের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এতে করে যেকোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
ভাতশালা এলাকার এবাদুল ইসলাম জানান, নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ভাতশালা বিশ্বাস বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেটি যেকোন সময় ভেঙে যেতে পারে। এতে আমরা ভয়ে আছি। জোয়ারের পানির চাপে যদি বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন। একই এলাকার আবদুল হাই বলেন, নদীভাঙনে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে নদী বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। এজন্য বেড়িবাঁধের এসব ভাঙ্গন পয়েন্টে জরুরী ভিত্তিতে কংক্রিটের ব্লক, বালিভর্তি বস্তা ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় দেবহাটা উপজেলা মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রায় ৩০বছর ধরে ইছামতী নদীতে ভাঙন চলছে। দেবহাটার ভাতশালা থেকে কালীগঞ্জের খারহাট পর্যন্ত ৭কিলোমিটার এলাকার ৮ থেকে ১০ জায়গায় ভাঙন অব্যাহত আছে। বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে। ভাঙন রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদীর পাশে শতাধিক ইটভাটা তৈরি করেছে। পাশাপাশি নদীর পাড় ঢালাই করে সুরক্ষা করা হয়েছে। এতেকরে নদী দিনকেদিন বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে।
এর দায় পাউবো এড়াতে পারেনা জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বাঁধ ভাঙ্গার আগে ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার পাউবো কর্তৃপক্ষ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলেই কেবল ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় তা মেরামতের কাজ শুরু করেন। ভাঙনের আগে থেকে তারা তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। দেবহাটা সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল জানান, ইছামতী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নদী ভাঙন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা দ্রুততম সময়ের ভিতরে বাঁধ সংস্কার করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বর্তমানে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি একটু বেশি বাড়ছে। এতে করে সীমান্তের ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভাঙ্গনকবলিত এলাকা আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন পয়েন্টগুলো মেরামতের কাজ করা হবে।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো-১) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শুভেন্দু বিশ্বাস বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ভাঙ্গন পয়েন্টগুলো পরিদর্শন করেছি। আপদকালীন কাজ হিসেবে জরুরী ভিত্তিতে এসব ভাঙ্গন পয়েন্টগুলো মেরামত করা হবে। যতদ্রুত সম্ভব বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করে সীমান্তের মানুষগুলো যাতে রক্ষা পায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ