বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ভর্তুকি সমন্বয় করতে সরকার বিদ্যুতের মূল্য শতকরা ৫’ভাগ বাড়ানোর পর গত বুধবার শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় ও আনুষঙ্গিক খরচের ওপর প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এক দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বাজারে মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে ৩’টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে, গত সপ্তাহ থেকে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির কেজিতে।

অন্যদিকে, ভরা মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণ মানুষ একে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অজুহাতে ব্যবসায়ীদের কারসাজি বললেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রভাব পড়ছে। যেজন্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওযায় নিত্যপণ্যের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক ব্যয় বাড়ছে। এদিকে, আমন মৌসুমেও বাজারে চালের দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনের ব্যবধানে মোটা বা মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পণ্যটি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করলেও তার কোনো প্রভাব নেই বাজারে।

রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, বাজারে মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা বুধবার বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া চিকন বা মিনিকেট চালের কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের নাজিরশাইলের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। কোনো কোনো এলাকায় প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আবার নিত্যবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। দোকানিরা এজন্য সামাজিক ও বিভিন্ন উৎসবকে দায় করছেন। চাহিদা বাড়ার কারণে ডিম ও মুরগির দাম কিছুটা বাড়ছে।

সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ভরা মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত শাকসবজি থাকলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো গেল সপ্তাহের তুলনায় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মুলা ও প্রতি পিস ফুলকপিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪০, ৪০ টাকার শিমের কেজি এখন ৬০, কাঁচামরিচ ১০০, করোলা ১২০, উচ্ছে ৮০, তাল বেগুন ৮০, লম্বা বেগুন৬০, বরবটি ১০০, ভালো মানের প্রতি পিস লাউ ১০০, মাঝারি আকার ও মানের প্রতি পিস ৮০ টাকা। এর আগে যা সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পেঁপের কেজি ২৫ থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন আলুর কেজি ৩০, ১০০ টাকার শিমের বিচি ১২০, খোলা মটরশুটির কেজি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের মধ্যে লাল, পালং, কলমি ও খেসারি ডালের শাকের আঁটি আকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও পুঁইশাকের আঁটি আকারভেদে ২৫ থেকে ৪০ টাকা।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে নিত্যপণ্যের প্রভাবের বিষয়ে টিকে গ্রুপের ফাইন্যান্স ও অপারেশন পরিচালক মো. সফিউল আতহার তাসলিম কালবেলাকে জানান, গেল বছর থেকে শিল্প মালিকরা চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এখন দাম বাড়ানোর ফলে সরবরাহ ঠিক থাকলে তা উৎপাদনে হয়তো সহায়ক হবে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির একটা প্রভাব নিত্যপণ্যের ওপর পড়বে। ঠিক কেমন প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে তাদের পর্যালোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে