২০০৪ সালের ২১’শে আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম নারকীয় ও পৈশাচিক নির্মম ঘটনা। এত ভয়ঙ্কর এত বীভৎস সমকালীন রাজনৈতিক ইতিহাস বিরল। উপর্যুপরি কমপক্ষে ১৩টি বোমা-গ্রেনেড বিস্ফোরণের সাথে ২২’জন তাৎক্ষণিকভাবে নিহত প্রায় ৩০০’জন নেতাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। অনেকে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। গোটা জাতি তথা বিশ্ব বিবেক এই নিষ্ঠুর, হিংস্র, বর্বরতায় স্তম্ভিত, বিস্মিত, বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল।১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ইং ২৯ বছর পর ইতিহাসে ঢাকা আবার একবার যেন থমকে দাঁড়ায় ।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশের বৃহত্তম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের প্রধান ও তৎকালীন সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী- তাঁকে সহ দলের প্রবীণ নেতৃবৃন্দের প্রাণনাশের উদ্দেশ্যেই এ ভয়ঙ্কর হামলা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। দলের আত্মত্যাগী নেতাকর্মীরা মানব-বর্ম করে তাঁকে অকুস্থল থেকে নিরাপদ, হেফাজতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। আল্লাহ তালার অশেষ মেহেরবানি ও তার অলৌকিক ক্ষমতাবলে জীবনে রক্ষা পেলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা।
দেশব্যাপী বোমা ও গ্রেনেড হামলা, পুলিশি নির্যাতন, সন্ত্রাসী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও শান্তিপ্রিয় মানুষের সমাবেশ হয়েছিল ২১ আগস্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই বোমা সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। সভাস্থলে এসে গ্রেনেড বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল তাঁদেরও দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, আত্মত্যাগী নেতাকর্মী, যারা বাংলার মাটিতে সন্ত্রাসমুক্ত বোমা আতঙ্কমুক্ত সুস্থ স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন চেয়েছিল। তাদেরই বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের বিশাল চত্বর। স্তব্ধ হয়ে গেল চিরতরে সেই কণ্ঠ বজ্রধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তুলেছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আকাশ, বাতাস মৃত্যুর ভয়াল ছোবল মারার কয়েক মুহূর্ত আগেও।
গভীর দুঃখ ও যন্ত্রণাবোধ নিয়ে বলতে চাই একবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সভ্যতার ও ভদ্রতার এ কোন পরাকাষ্ঠা আমরা দেখতে পাচ্ছি? গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এ কোন হীনতা? যে দেশের শান্তিপূর্ণ ও সু-শৃংখল ভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, অন্যায় অবিচার অপশাসন ও দু:শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারব না। ধিক সেই সভ্যতা। ধিক সেই গণতান্ত্রিক চর্চা। ২১’শে আগস্ট সংঘটিত পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হামলটি কারা ঘটালো, কেন ঘটালো, সেই সব বিষয়ের ওপর যদি একটু আলোকপাত করি, তাহলে দেখতে পাই যে বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শন, অসাম্প্রদায়িক, অবিভাজ্য, মাতৃ ভাষাকেন্দ্রিক ও ভূ-খণ্ডভিত্তিক রাজনীতি বিরোধী একটা গভীর ষড়যন্ত্র।
অতএব শেখ হাসিনা বিহীন আওয়ামী লীগ মানেই হলো আওয়ামী লীগ বিহীন রাজনীতি। আওয়ামীলীগ বিহীন রাজনীতি মানেই হলো দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতানর বিলুপ্তি ও বাঙালি জাতিসত্তার বিনাশ তথা দ্বিজাতিতত্ত্ব জাতীয়তাবাদেরও বিকাশ আর দ্বিজাতিতত্ত্ব জাতীয়তাবাদের বিকাশ মানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান। তাই নির্ধিদ্বায় বলা যায়, ২১ আগস্টের এই বীভৎসতা ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট এরই প্রতিধ্বনি। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠীর ও কায়েমি স্বার্থবাদী মহল সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার মাধ্যমে এ দেশের মাটি থেকে মুজিব আদর্শ দর্শনকে চিরতরে মূলোৎপাটন করতে চেয়েছিলো। বাঙালি জাতীতাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নির্বাসিত করতে চেয়েছিলো এ দেশের মাটি থেকে, কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ আল্লাহ্ তা’আলার অশেষ মেহেরবাণীতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের শেষ চিহ্ন যার ধমনীতে আজও প্রবাহিতক বঙ্গবন্ধুর দু’ই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, ‘৭৫-এর সেই ভয়াল রাতে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ২০ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁদের রক্তের স্রোতে হোলি খেলেও রক্তপিপাসু হায়েনাদের রক্তের তৃষ্ণা নিবৃত হয়নি। তাই ‘৭৫-এর পর থেকেই তার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের মাধ্যমে ‘৭১-এর পরাজিত শক্তি ও ‘৭৫-এর খুনিচক্র এক হয়ে তাঁদের পরাজয়ের প্রতিশোধ ও রাজনৈতিক জিঘাংসাকে চরিতার্থ করার লক্ষেই সংঘবদ্ধ হয়ে ২১ আগস্ট এই দুঃসাহসী প্রাণনাশী বোমা হামলা চালায়।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা সেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ যারা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তাঁদের সকলকে একযোগে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যেই সু-পরিকল্পিতভাবে এই হত্যার প্রচেষ্টা। খুনিচক্র সেদিন বুঝতে পারেনি যে বঙ্গবন্ধু কন্যাই একদিন গণতন্ত্রের মানসকন্যা হয়ে বঙ্গবন্ধুহীন আওয়মী লীগকে পুনর্গঠন পুনরুজ্জীবিত করে দেশ শাসন করবেন। পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বুকে আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভা নিয়ে, চেতনার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে শেখ হাসিনা রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পুনরায় ক্ষমতায় আনেন। তিনি ক্ষমতায় আসীন হয়ে প্রথমেই দলকে আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করেন। অতীতের সকল মিথ্যা অপবাদ, অপপ্রচার, বিভ্রান্তি দূর করে এদেশের মানুষের জন্য সার্বিক কল্যাণ বয়ে এনেছিলেন, দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ত্ব অটুট রেখে প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহের সাথে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি বজায় রেখে রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতন্ত্রকামী রাষ্ট্র হিসেবে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছিল। আওয়ামী লীগ শাসনামলে যে কয়টি যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হয়েছে তন্মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা, জাতীয় চার নেতার হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিতকরণ উল্লেখযোগ্য।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত খুনি আসামিরা যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে, তারাই হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগ, এবং আওয়ামী লীগবিহীন বাংলাদেশ কায়েম করার বিভিন্ন অপতৎপরতায় মেতে উঠেছে। ‘৭১-এর পরাজিত শক্তির যারা স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে রচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংবিধানকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নিতে পারেনি- তারাই আজ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ওই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিচক্রদের সাথে একাত্ম হয়ে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। এই জঙ্গি জিহাদের মূল টার্গেট ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ নামক রাজনৈতিক দলটাকে নেতৃত্বশূন্য করা, যাতে আগামী ২০ বছরেও এ দল রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম না হয় সে লক্ষ্যে তাঁরা এই দেশটিকে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে একচেটিয়াভাবে রাজত্ব কায়েম করে যেতে পারে। দেশের নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, বোমা, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এই সমস্ত অপশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের গঠনমূলক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে দেশের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায় এর ভিত্তিতে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার সম্যক সম্ভাবনা রয়েছে।
২১’শে আগস্ট তাদের সেই হিংস্র প্রতিশোধ, বর্বর জিঘাংসা ও সর্বোপরি আত্মরক্ষামূলক স্বার্থ চরিতার্থ করার এক নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই নৃশংস, নির্মম ঘটনাটি ইতিহাসের পাতায় আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে চিরকাল চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ২১’শে আগস্টের এই নারকীয় ঘটনায় বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। বাঙালি জাতির বড়ই দুর্ভাগ্য যে আজ দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলোতে আমরা দেখতে পাই শুনতে পাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন। ২১’শে আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদে বিরোধী দলীয় (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার ওপর ও ব্রিটিশ হাই কমিশনার জনাব আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা হামলা, চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধার, কূটনৈতিক পল্লির কাছাকাছি অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনাবলির সুষ্ঠু ও অবাধ তদন্ত দেশবাসী কামনা করে। আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স ইন বাংলাদেশ বোমা হামলার সঠিক তদন্ত ও জনসমক্ষে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছিলেন।
তাছাড়া ৪’ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাস দমন বিভাগের প্রধান কফার ব্ল্যাক বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। তাঁর মতে “বহির্বিশ্বের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ একটি ‘আসামি রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত এবং বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ‘সন্ত্রাসী চক্রের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে বলে জানান। তৎকালীন ঢাকাস্থ ফরাসি রাষ্ট্রদূত মাইকেল লুমের আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সুধা সদনে সাক্ষাৎকালে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন ফরাসি সরকার চায় গ্রেনেড বোমা হামলার সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত। তিনি আরো বলেছিলেন এই হত্যা প্রচেষ্টায় যারা জড়িত শুধু তাদের নয়, বরং যারা এই হত্যা পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন ও হামলায় সহায়তা প্রদান করেছেন তাদেরও বিচার হওয়া উচিৎ।
সুধী পাঠক, উপরোক্ত মন্তব্যসমূহ হতে এটা অতি সহজেই অনুমেয় যে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে কী ভাবমূর্তি পোষণ করছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে সরকার তারা কি উপলব্ধি করতে পারছেন না দিনে-দিনে আমরা আমাদের এই দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের এক অতল গহ্বরে দিকে ঠেলে দিচ্ছি? ২১’শে আগস্ট ট্র্যাজেডির পর সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপই তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত হয়নি- যাতে করে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে আমরা আসামি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানাতে পারি।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ যথা- সিআইডি, এসআই, এসবি,ডিবি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল, এফবিআই -এর সমন্বিত প্রচেষ্টাতেও তদন্ত কার্যক্রমে কোনো সঠিক অগ্রগতি সাধিত হয়নি। আজ দেশের ১৪ কোটি মানুষের মনে শুধু একই প্রশ্ন যে একটি গণতান্ত্রিক দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভানেত্রী ও সংসদে বিরোধী দলের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনার গোয়েন্দা সংস্থা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল কি? অবাক কাণ্ড! উপরন্তু অপরাধীরা অপরাধ সংঘঠনের পর পর সরকারি পুলিশ বাহিনী কাঁদানী গ্যাস নিক্ষেপ করে অপরাধীদের সুকৌশলে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সরকার সুকৌশলে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সাহায্য প্রার্থনা করে তাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তবে ইন্টারপোল ও এফবিআই তো কোনো তদন্তকারী সংস্থা নয়। তারা কেবল সদস্যভূক্ত।
অন্যদিকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি সর্বদলীয় তদন্ত কমিটি একে অপরকে তদন্ত কাজ ব্যাহত করার জন্য দোষারোপ করে চলেছেন। বিশেষ করে তৎকালীন আইনমন্ত্রী মওদুদ সাহেবের উক্তি অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল এবং এই কমিটির কোনো আইনগত ভিত্তি ছিলো না। এদিকে আওয়ামী লীগ মনে করে তৎকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিশন কেবলই লোক দেখানো বিচারের নামে এক ধরণের প্রহসন।
আজ সময়ের দাবি সকল জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একাত্মতা ঘোষণা করা। অপরাধীদের শেকড়ের সন্ধান মূলোৎপাটন করা, মানবতার স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের স্বার্থে সর্বোপরি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে।আর সেই কাজটি আজ শতভাগ সফল করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্নিকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক ও কলামিস্ট, নূর-উন-নাহার মেরী