সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি দম্পতি হত্যা মামলার বিচার, চার্জশিট তো দূরের কথা ১০’বছরে তদন্তই শেষ হয়নি। ৮৫’বার সময় নিয়েও তদন্তকারীরা আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেননি। ৮৬’বারের জন্য সময় চেয়েছেন। দীর্ঘ ১০’বছর পার হয়ে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার মামলার তদন্ত আলোর মুখ দেখিনি। তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করতে করতে রুনির মা নূরুন্নাহার মির্জা গত ৫’ই জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। সাগরের মা সালেহা মনিরের শরীরে নানাধরনের অসুখ বাসা বেঁধেছে। দশটি বছর ধরে পুত্রশোকে ভেঙে পড়েছে শরীর, বিছানায় শয্যাশায়ী। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের তারিখ ৮৫’বার পেছানো হয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি সংবেদনশীল। খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে এজন্য গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ২০১২’সালের ১১’ই ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর রাজাবাজারের নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি দম্পতি। এ’ঘটনায় রুনির ছোট ভাই নওশের রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনি ধরা পড়বে। সেই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে ১০ বছর হয়ে গেল। এ ঘটনার কোনো কূলকিনারা নেই। দায়ের করা মামলাটির প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ওই বছরের ১৬ই ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় র‌্যাবকে। সেই থেকে ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র‍্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতো এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি। উল্টো ৮৫’বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। এর আগে ১০ বছরে ৮৪ বার সময় পেয়েও সাংবাদিক সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি দম্পতির হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। গত ২৪শে জানুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন দাখিল না করে আবারো সময় চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম আগামী ২৩’শে ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করে দেন। এ’নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৮৫’বার সময় পেলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

নিহত সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহীর সারোয়ার মেঘ-এর এখন সাড়ে ১৫ বছর বয়স। মেঘ এখন ক্রিকেট খেলছে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট টিমে। ইতিমধ্যে পঞ্চগড় জেলার অনূর্ধ্ব-১৬ টিমের হয়ে খেলায় অংশ নিচ্ছে। সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত ইয়াং টাইগার্স ইউ-১৬ জোনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অলরাউন্ডার মেঘ খেলছে পঞ্চগড়ের হয়ে। মেঘ ধানমণ্ডির শেখ জামাল ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় ২০২১ সালের মার্চ মাসে র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে অগ্রগতির প্রতিবেদন দিয়ে বলেছিলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দু’জন অপরিচিত ব্যক্তি জড়িত ছিল। সাগরের হাতে বাঁধা চাদর এবং রুনির টি-শার্টে ওই দুই ব্যক্তির ডিএনএর প্রমাণ মিলেছে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে ডিএনএ রিপোর্ট প্রস্তুতকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি ল্যাব যথাক্রমে ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস এবং প্যারাবন স্ন্যাপশট ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বর্তমানে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠান দু’টি ডিএনএর মাধ্যমে অপরাধীর ছবি বা অবয়ব প্রস্তুতের প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে।

মামলার বাদী রুনির ছোট ভাই নওশের রোমান মানবজমিনকে জানান, এই মামলাটির তদন্ত নিয়ে এত পরিমাণ নাটক হচ্ছে যে, এখনো তদন্তে দু’জন অজ্ঞাত ব্যক্তির কথা বলছে। এখনো ডিএনএ নমুনার রিপোর্ট নিয়ে কথা বলছে। আসলে এখানে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সরকার আন্তরিকভাবে দৃষ্টি দিলে, তদন্তের জন্য র‌্যাব হোক আর অন্য কোনো সংস্থা হোক সেটা তদন্ত হবে। তদন্ত যারাই করুন- আসলে আমরা বিচার চাই।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে