গত দুই বা তিন দশকে বেশ কিছু শব্দ ইংরেজি বা অন্য বিদেশি ভাষা থেকে বাংলায় মিশেছে। মিশে যাচ্ছে অথবা এখন অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। ভবিষ্যতে এগুলো বাংলা শব্দ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশপাশের কথাবার্তায় শিশু ও তরুণরা এই কথাগুলো স্বাভাবিক হিসেবেই নিচ্ছে। নিজস্ব শব্দগুলো ভুলে যাচ্ছে।

দৈনন্দিন নিজস্ব যে শব্দগুলো বাদ দিয়ে বিদেশি ব্যবহার হচ্ছে তাহলো, অধ্যাপক>প্রফেসর, সালাম/আদাব/নমস্কার>হাই, খোদা হাফেজ>বাই, দুঃখিত>সরি, সকালের ব্যায়াম বা হাঁটা>মর্নিংওয়াক, দাঁত মাজা> দাঁত ব্রাশ, গোসলখানা>বাথরুম/ওয়াশরুম, পায়খানা>টয়লেট, দুপুরের খাবার>লাঞ্চ, রাতের খাবার>ডিনার, রান্নাঘর>কিচেন, বৈঠকঘর বা বাইরের ঘর>ড্রাইং রুম, শোবারঘর>বেডরুম, খাবার ঘর>ডাইনিং রুম, শিক্ষক>টিচার, খাতা>নোট বুক, শ্রেণি>ক্লাশ, দ্বিতীয় শ্রেণি> ক্লাশ টু, বিশ্ববিদ্যালয়>ইউনিভার্সিটি, শ্রেণি বক্তৃতা>লেকচার, বাড়ির কাজ (স্কুলের পড়া অর্থে বেশি ব্যবহার)>হোম ওয়ার্ক, শ্রেণির কাজ>ক্লাশ ওয়ার্ক, শ্রেণি কক্ষ>ক্লাশ রুম, বাবা>ড্যাড, মা>মাম, চাচা/মামা/খালু/ফুফা> আঙ্কেল, চাচি/খালা/মামি/ফুফু>আন্টি, বন্ধু>ফ্রেন্ড/দোসত্, অতিথি/মেহমান>গেস্ট, ঠিক আছে>ওকে, চাকরি>জব, ধন্যবাদ>থ্যাঙ্কস, দয়া করে>প্লিজ, স্বাগতম>ওয়েলকাম, শুভ সকাল>গুডমর্নিং, শুভরাত্রি>গুডনাইট, সংবাদপত্র>প্রিন্ট মিডিয়া ইত্যাদি।

সচেতন ও অসচেতন অবস্থায় যে ভাষা ব্যবহার হচ্ছে তা মিশ্র ভাষা, কখনো আঞ্চলিক। প্রমিত বাংলা খুবই কম। যেমন প্রমিত বাংলা ‘এসেছ’ বলা হচ্ছে ‘আসছ’। এভাবে, ‘করেছিস’ কে ‘করছিস’, ‘আল্লাহ’ কে ‘আল্লা’, ‘তাহলে’ কে ‘তাইলে’, ‘খরচ’ কে ‘খরছ’, ‘ধরে’ কে ‘ধইরা’ ‘গুলো’ কে ‘গুলা’ ‘পড়ছে’ কে ‘পরছে’ ‘এসো’ কে ‘আইসো’ ইত্যাদি বলা হচ্ছে।

শুধু বাংলা শব্দ দিয়ে বাক্য বলেন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাক্যের কোথাও না কোথাও অকারণ বিদেশি শব্দ আছেই। এটা প্রায় সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বেশি। বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এর উর্দ্ধে নন। টেলিভিশনে বিশিষ্টজনদের আলোচনা শুনলে এধরণের শব্দ বাক্য শোনা যায় সব সময়। যেমন, ‘এক্সকিউজ মি আপনার প্রোবলেমটা কী?’ ‘ডোন্ট মাইন্ড আমি আসলে এটা বলতে চাইনি’, ‘আই এম সো সরি লেট হয়ে গেছে’, ‘ডোন্ট ওয়ারি আমি দেখছি’, ‘প্লিজ আমাকে একটু হেলপ কর’ ইত্যাদি। এই বাক্যগুলোর প্রত্যেকটা সুন্দর বাংলায় বলা সম্ভব। কিন্তু লেখাপড়া জানা মানুষের মুখে সেটা কম। প্রায় প্রতিবাক্যেই এক বা একাধিক বিদেশি শব্দ আছেই। এ শব্দ বা বাক্যগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলায় স্থান পায়নি। কিন্তু যারা এভাবে এখন কথা বলছেন তারা যখন নিয়ন্ত্রকের জায়গাতে আসবেন তখন কী হবে বলা মুশকিল।

লেখকঃ রফিকুল বাসার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে