চট্টগ্রামঃ  নাট্যদলগুলো আমাদের মৌলিক সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে, এজন্য তারা সমাজের, রাষ্ট্রের ধন্যবাদ পাওয়ার দাবী রাখে, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘তীর্যক নাট্যমেলা-২০১৯’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
 
ড. হাছান বলেন, আজকে আকাশ সংস্কৃতির হিংস্র যুগে নাট্যদলগুলো যে টিকে আছে এবং এখনো যে মঞ্চ নাটক হয়, এটি আশার বিষয়। চট্টগ্রামে এক সময় মঞ্চ নাটকের চর্চা অনেক ব্যাপক ছিল। মাঝখানে একটু স্তিমিত হয়েছিল। এখন ১৮টির বেশী নাট্যদল চট্টগ্রামে সক্রিয় আছে। ঢাকায়ও মাঝখানে মঞ্চ নাটক স্তিমিত হয়েছিল। এখন তরুণরা নাট্যচর্চাকে আবার বেগবান করার চেষ্টা করছে। আমাদের মৌলিক সংস্কৃতিকে নাট্যদলগুলো ধরে রেখেছে। এজন্য তারা সমাজের, রাষ্ট্রের ধন্যবাদ পাওয়ার দাবী রাখে।
 
তিনি বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে নাট্যদলগুলোর ভূমিকা ছিল। গণতন্ত্র যখন বাক্সবন্দি হয়েছে, গণতন্ত্রের পায়ে যখন শিকলবন্দি করা হয়েছে, তখনই নাট্যদলগুলোর অসামান্য অবদান ছিল। তখন দেশের নাট্যদলগুলো পথনাটকের মাধ্যমে মানুষকে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এগুলো স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
 
তথ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নত রাষ্ট্র গঠন করার পাশাপাশি উন্নত জাতিও গঠন করা প্রয়োজন। শুধু ভৌত অবকাঠামো বা বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্র গঠন করা যায়, কিন্তু উন্নত জাতি গঠন করা যায় না। উন্নত জাতি গঠন  একটি ভিন্ন কাজ। উন্নত জাতি গঠন করতে হলে আত্মিক উন্নয়ন প্রয়োজন।
 
তিনি বলেন, যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে সাথে মানুষগুলোও যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে। অনুভূতি লোপ পাচ্ছে। মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ লোপ পাচ্ছে। মানুষ ক্রমাগতভাবে আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে। এখন মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবে। এমনকি পরিবার নিয়েও ভাবে না। এটি মনুষ্য সমাজের জন্য হুমকি।
 
মন্ত্রী বলেন, মানুষের মানবিকতা যাতে থাকে, মানুষের মূল্যবোধগুলো যেন গভীরভাবে প্রোথিত হয়, মানুষের মমত্ববোধ যাতে হারিয়ে না যায়, মনুষ্যত্ব যাতে জাগ্রত থাকে, সেজন্য নাটক ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি নাটকের মাধ্যমে সমাজের প্রতি বার্তা দেয়া যেতে পারে। 
 
‘আমি টেলিভিশনে একটি নাটকে দেখলাম, ইংলিশ মাধ্যমের স্কুলের সামনে গিয়ে অভিভাবকরা বসে আছেন। একজন জিজ্ঞেস করছে, আপনি কী করেন? আমি অমুক অফিসে প্রধান সহকারীর চাকরি করি। আপনার বেতন কত? বললো ১০ হাজার টাকা। আপনার এখানে কয় ছেলে-মেয়ে পড়ে। দুই ছেলে-মেয়ে। তাদের বেতন কত? ১২ হাজার টাকা। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি এত টাকা পান কই? আপনার বেতন ১০ হাজার টাকা, আর আপনি ১২ হাজার টাকা ছেলে-মেয়েদের বেতন দেন।’ 
 
‘এই যে নাটকের মাধ্যমে সমাজের প্রতি একটি বার্তা দেয়া, আমি মনে করি এটি সমাজকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে, সমাজকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে, সমাজের অসংগতি দূর করার ক্ষেত্রে, সমাজ থেকে অনাচার দূর করার ক্ষেত্রে, মানুষকে মানবিক রাখার ক্ষেত্রে এবং মানুষের মানবিকতা, মূল্যবোধ উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে নাটক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তির্যক নাট্যদল সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে নাটকের মাধ্যমে’, বলেন তথ্যমন্ত্রী।
 
ছাত্রজীবনে তীর্যক নাট্যদলের সদস্য ছিলেন জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে উপস্থিত বন্ধু আমিন হেলালী আমাকে ধরে নিয়ে তীর্যক নাট্যদলের সদস্য করে দিলেন। তবে নাটকের কোন রোল আমি পাইনি। আমার কাজ ছিল জিনিসপত্র টানাটানি আর টিকিট বিক্রি করা। তবে তীর্যক নাট্যদলের সাথে আমার যে নাড়ির সম্পর্ক, সেটি কখনো ছিন্ন হয়নি। তির্যক নাট্যদলও আমাকে মনে রেখেছে, তাদেরকে ধন্যবাদ। কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলার মুখ এর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। অর্থ্যাৎ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে আমার যোগাযোগ ছোটবেলা থেকেই। 
 
তীর্যকের নাট্যদলের প্রধান আহমেদ ইকবাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ভারতের প্রবীণ নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী ও নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ।থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) শুরু হওয়া পাঁচদিনের তীর্যক নাট্যমেলা-২০১৯ চলবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে