কথা বলো নারীর আয়োজনে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নজরুল হামিদ মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর ভূমিকা নিয়ে সুলতানার স্বপ্ন-২৯২৪ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত মতবিনিময় সভায় জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের চিত্র প্রদর্শনী করা হয় এবং তরুণ নির্মাতা জাফর মুহাম্মদের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘’অভ্যুত্থানের নারীরা’ প্রদর্শন করা হয়।
কথা বলো নারীর আহবায়ক নুসরাত হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, অবদমনের ফলে নারী কথা বলা ভুলে গেছে। অভ্যুত্থানের নারীদের সঠিকভাবে স্বীকৃতিদানের প্রতিজ্ঞা করছি। আমরা তাদের হারিয়ে যেতে দেবোনা। আগামী দুইমাসের মধ্যে আন্দোলনকারী নারীদের তালিকা তৈরি করা হবে সুষ্ঠুভাবে। আন্দোলনের ভিডিও ক্লিপ, ছবি সংগ্রহ করে আর্কাইভ তৈরি করা হবে। যাতে আন্দোলনে নারীর অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা না যায়। তিনি নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রটির প্রশংসা করেন এবং ‘’কথা বলো নারী’ কে এধরণের আরও উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাসও প্রদান করেন।
মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, এখনো পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব সর্বত্র বিরাজমান। যে গতিতে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসন চলছে তাতে ফল পেতে ২৫০ বছর লাগবে।নারীকে যেখানেই দায়িত্ব দেয়া হোক, নারী সেটাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সততার সাথে পালন করবে। একাত্তরের পর যেভাবে নারীদের অবদান হারিয়ে গেছে সেটা প্রতিহত করতে হলে নারীকে অবশ্যই কথা বলতে হবে। সংগ্রামের দীর্ঘপথ বাকি এখনো। নারীদের সাইবার বুলিংয়ের প্রতিকারে নারীদের মতামত আহ্বান করছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক শ্যামলী শীল বলেন, নারী মুক্তি মানেই সমাজ, দেশ, দশের তথা পুরুষেরও মুক্তি। শুধু নারীর অংশগ্রহণ নয় কেবল নেতৃত্বই যেকোন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সফলতা আনতে পারে। নীতিনির্ধারণিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, আইন প্রয়োগ করতে হবে রাজনীতিতে নারীদের সুযোগ নিশ্চিতকরণে। সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত নারীদের সুষ্ঠু ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন,আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়নি।অভ্যুত্থানের সকল অংশীদারদের (পেশাজীবী) ভয়েস কোথায়? আন্দোলনে মেয়েদের ভ্যানগার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে যেন পুলিশ হামলা না করে। বাংলাদেশের পলিটিক্যাল ফ্র্যাটারনিটি পুরোটাই মেল ডমিনেটেড। নারীকে আদারিং করার প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নুসরাত হক বলেন, বয়স কম হলেও জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দায়িত্ব নিতে শিখিয়েছে। সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করার জন্যই “কথা বলো নারী”র উত্থান।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারীদের মধ্যে কথা বলেন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মারিয়া তানজিমাৎ, ঢাকা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার বাশরীন রহমান, নারী উদ্যোক্তা তাহমীনা শৈলী, উন্নয়ন কর্মী সোনিয়া ইসলাম খান, চব্বিশের উত্তরা সংগঠনের আহবায়ক মনিষা মাফরুখ, প্রকাশনা সংস্থার প্রতিনিধি লাবণী মন্ডল, ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সীমা আক্তার, মৌমিতা নূর, স্নেহা আক্তার, আইরিন আকতার ও তরুণ নির্মাতা জাফর মুহাম্মদ প্রমুখ।