২০১৩ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ প্রস্তাব করেন। এর পর, বিগত ১১ বছরে, বিভিন্ন পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায়, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় যৌথ নির্মাণের ধারণা বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। স্বাক্ষরিত ‘প্রমাণিত অর্থনৈতিক অপারেটর’ (এইও) পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তির সংখ্যা ও পারস্পরিক স্বীকৃতির দেশগুলোর সংখ্যার দিক দিয়েও এটি বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদারীকরণ এবং সুবিধার স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় নির্মিত চীন-ইউরোপ রেলপথে এ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। চীন-ইউরোপ রেলপথ ২৫টি ইউরোপীয় দেশের ২২৭টি শহরে এবং ১১টি এশিয়ান দেশের শতাধিক শহরে পৌঁছেছে। এটি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর উচ্চ-মানের যৌথ নির্মাণের একটি প্রাণবন্ত অনুশীলন হয়ে উঠেছে।
গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকের কিরগিজস্তান স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে, চীনের চেচিয়াং প্রদেশের নির্মিত কিরগিজস্তানের লুবান স্টুডিও আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। এ স্টুডিও অসামান্য প্রাচীন চীনা কারিগর লু পানের নামে বৃত্তিমূলক শিক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বিনিময় প্ল্যাটফর্ম। এটি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তিবিদ গড়ে তুলতে কাজ করছে। যৌথভাবে লুবান স্টুডিও নির্মাণের ওপর সি চিন পিং বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের মে মাসে চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে সি তাঁর ভাষণে মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোয় আরও বেশি লুবান স্টুডিও নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন।
বিগত ১১ বছরে বিভিন্ন দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে, চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত সার্বিয়ার বেলগ্রেডে জেমুন-বোরকা সেতু চালু হয়। এটি বেলগ্রেডের দানিউব নদীর উপর একটি মাত্র সেতু থাকার প্রায় ৭০ বছরের ইতিহাসের অবসান ঘটিয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চীন-লাওস রেলপথ সার্বিকভাবে চালু হয়। ২০২২ সালের মার্চ মাসে চীনের সহায়তায় নির্মিত তেবেনখমুন চীন-কম্বোডিয়া ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল চালু হয়। ২০২৪ সালের অগাষ্টে চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মিত নাউরুর ইও পোর্ট টার্মিনাল আপগ্রেড প্রকল্পের বিপরীত অসমোসিস পাম্প রুম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর চীন ও পেরুর উপস্থিতিতে দু’দেশ আরেক ধাপে ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ যৌথ নির্মাণের সহযোগিতার পরিকল্পনা চুক্তি স্বাক্ষর করে। দু’দেশ অবকাঠামো, পণপরিবহন, বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রের সহযোগিতা জোরদার করবে।
গত মে মাসে ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরামের সচিবালয় কার্যালয় উন্মোচন করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে তৃতীয় ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ মেধাস্বত্ব উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে পেটেন্ট ত্বরান্বিতের পাইলট পরীক্ষা, ভৌগোলিক ইঙ্গিত সুরক্ষা, এবং সহযোগিতা পাইলট প্রকল্পসহ বিভিন্ন নতুন বাস্তবসম্মত সহযোগিতা প্রকল্প চালু করার কথা ঘোষণা করা হয়। গত অক্টোবরে তৃতীয় ‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রীদের সম্মেলনে “‘বেল্ড অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ সবুজ জ্বালানিসম্পদ সহযোগিতার কর্মপরিকল্পনা (২০২৪-২০২৯)” প্রকাশিত হয়।
বর্তমান বিশ্বে অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যোপের মাধ্যমে মতভেদ সমাধান করা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আশা সবার। চীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে উচ্চ মানে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায়। আর এর লক্ষ্য, মানবজাতির সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলা।
সূত্র: ছাই-আলিম-ওয়াং হাইমান,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।। বিডি টাইমস নিউজ