আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইডথের প্রবাহ নিশ্চিত করে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম অপারেটর বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) এবং বেসরকারি খাতের ইন্টারন্যাশনাল টিরেস্ট্রিয়াল কেবল অপারেটর। এ দুই অপারেটর ইন্টারনেট সরবরাহ করে মূলত ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) অপারেটরদের কাছে। আইআইজি অপারেটররা মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করে। এমএনও অপারেটররা ইন্টারনেট সেবা দিতে টাওয়ার কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। আর সব অপারেটর সেবা নিতে নির্ভর করতে হয় নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটরের ওপর।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আমাদের নেটওয়ার্ক সিস্টেমে অনেক লেয়ার রয়েছে। এত লেয়ারের কোনো প্রয়োজন নেই। যারা এ পুরো ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত তাদের সবার ব্যবসায়িক লাভ থাকতে হয়, বিটিআরসিকে রেভিনিউ শেয়ার করতে হয়, ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। এসব লেয়ার কমিয়ে ফেলা উচিত। আইআইজি, এনটিটিএন, টাওয়ারকো এতকিছুর তো প্রয়োজন ছিল না। অপারেটররা সরাসরি সাবমেরিন কেবল থেকে ব্যান্ডউডইথ কিনবে, সেখান থেকে আইএসপি ও এমএনওরা গ্রাহকদের সার্ভ করবে।’
বিটিআরসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি বছর ৩ কোটি টাকা বার্ষিক লাইসেন্স ফি, মোট আয়ের ৩ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার ও ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ফান্ডে (এসওএফ) দিতে হয় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানিকে। আইটিসি অপারেটরদের বার্ষিক লাইসেন্স ফি দিতে হয় ৫০ লাখ টাকা ও আয়ের ১ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার।
এনটিটিএন অপারেটরদের বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ ২৫ লাখ টাকা, ৩ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার ও ১ শতাংশ এসওএফে প্রদান করতে হয়। টাওয়ার কোম্পানিগুলোকে ৫ কোটি টাকা বার্ষিক লাইসেন্স ফি, ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার ও ১ শতাংশ দিতে হয় সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে।
আইএসপি অপারেটরদের জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভক্ত করেছে বিটিআরসি। এর মধ্যে জাতীয় আইএসপি অপারেটরদের বার্ষিক ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, লাইসেন্স নবায়ন ফি ৫ লাখ টাকা ও ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থ আদায় করা হয়। বিভাগীয় লাইসেন্সে ১ লাখ, জেলা পর্যায়ে ৫০ হাজার এবং উপজেলা পর্যায়ের আইএসপি থেকে ১০ হাজার টাকা বার্ষিক ফি আদায় করা হয়। এছাড়া সব অপারেটরকে মোট আয়ের ১ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হয় এসওএফে।
অ্যাম্বার আইটি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আমিনুল হাকিম বলেন, ‘রেভিনিউ শেয়ার, এসওএফ ও ভ্যাট বাদ দিলে ইন্টারনেট সেবার ব্যয় ৩৫-৪০ শতাংশ কমে যায়। সরকার যদি পদক্ষেপ নেয় তাহলে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যয় ২০ শতাংশের বেশি কমানো সম্ভব। পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাম আরো কমে যাবে, পেনিট্রেশনও বৃদ্ধি পাবে।’
জানতে চাইলে অ্যামটব মহাসচিব লে. কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অব.) বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত নানাবিধ ফি ও কর সরাসরি মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্যকে প্রভাবিত করে। এছাড়া মোবাইল সেবাদানকারীদের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক ও কর পরোক্ষভাবে এ মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। বলাবাহুল্য, একটি যৌক্তিক কর ও শুল্ক কাঠামো নিরূপণ করা গেলে গ্রাহককে ইন্টারনেট ব্যবহারে ইতিবাচকভাবে উৎসাহিত করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সরকার অতিদ্রুত বিটিআরসি ও এনবিআরের সঙ্গে বিবেচনাপ্রসূত এবং গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক হার কমানোর বিষয়ে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করি।’ ”
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ৪ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা অপারেটরদের কাছ থেকে আয় করে। এর মধ্যে লাইসেন্স ফি বাবদ ১৪১ কোটি, রেভিনিউ শেয়ারিং ২ হাজার ৭৫ কোটি, স্পেকট্রাম চার্জ ১ হাজার ৭৯০ কোটি, লাইসেন্স অ্যাকুইজিশন ফি ৪৩ কোটি ৫৯ লাখ, অ্যাপ্লিকেশন ও মূল্যায়ন ফি ২ কোটি ১৬ লাখ ও প্রশাসনিক জরিমানা বাবদ ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বিলম্ব ফি ৫৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, শেয়ার ট্রান্সফার ফি ১ কোটি ৭৪ লাখ, লাইসেন্স নবায়ন ফি বাবদ ৫ কোটি ও অন্যান্য খাতে ২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়।
এ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব খাতে আদায় করে ৪ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮০১ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭১৯ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা আদায় করেছিল বিটিআরসি।
তথ্যঃ বণিক বার্তা