তুহিন হোসেন,পাবনা সংবাদদাতাঃ শিম বাংলাদেশের অন্যতম লতা জাতীয় শীতকালিন সবজি। উপজেলায় গ্রীস্মকালীন সবজি হিসেবে আগাম জাতের শিমের আবাদ হচ্ছে। শিম লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন-দিন এই আবাদের দিকে ঝুঁকছে। ভালো ফলন ও বেশি দামে শিম বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক।
আটঘরিয়ায় শীতের আগেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে শিম। ভালো ফলন ও বেশি দামে শিম বিক্রি করতে পেরে খুশি তারা। অসময়ে শিমের আবাদ সম্পর্কে জানতে গ্রামের মাঠের দিকে তাকালেই দেখা যায় জমি জুড়ে শিম আর শিমের মাঠ। মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরী করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশিল অটো জাতের এই শিম।
বিকেল হলেই চাষীরা তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে শিমের পরিচর্যায় ব্যাস্ত থাকেন। কারন বিকেলের দিকে শিমের পরিচর্চার উপযুক্ত সময়। চলতি মৌসুমে আটঘরিয়া উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার চাষিরা বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করছেন। এর মধ্যে শিমের উল্লেখ যোগ্য জাত হলো- অটো, রুপবান, চকলেট, কেরালা জাতের শিম আবাদ করেছে বেশি। এছাড়াও স্থানীয় জাতের শিমও আবাদ হয়েছে প্রচুর পরিমাণের। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে ফলন ভাল হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা । তবে দাম ভালো পাওয়ায় শিম আবাদের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেনতারা।
কৃষকরা জানান, অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলে এবং পরে গরমে গাছের ফুলগুলো ঝড়ে পড়ে। একই সঙ্গে গাছে পঁচন দেখা দেয়। উপজেলার সব এলাকায় কমবেশি শিম আবাদ হলেও আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া, চাঁদভা, সড়াবাড়িয়া, খিদিরপুর, দেবোত্তর এবং আটঘরিয়ার কিছু এলাকায় বেশি পরিমাণে আগাম জাতের শিম আবাদ হয়েছে। ধলেশ্বর গ্রামের শিম, চাষি (মস্তফা) জানান, তিনি কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের শীম চাষ করছেন। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুব খুশি। ভাগ্য বদলে শিম চাষ খুবই ভুমিকা রাখছে।
ওসমান জানান,আগাম জাতের শিম আবাদ করে আসছি। প্রতি বছরই কম বেশি লাভ হচ্ছে। তার এই শিম আবাদ করা দেখে এলাকায় অনেকেই এগিয়ে এসেছেন শিম চাষে। তিনি আরো জানান, আগাম জাতের এই শিমের বীজ জমিতে সাধারণত জুন মাসে বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর গাছ গুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। বৃষ্টিতে বা গাছগুলো মারা না গেলে দীর্ঘ ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
একই এলাকার শিম চাষি রওশন জানান, এবছর আমি আমার ২বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। ফলন মোটামুটি ভালো। ইতিমধ্যে আমি ১০ হাজার টাকার শিম বিক্রয় করেছি। আশা করছি আগমী শনিবারে এক চালানেই ৪০ হাজার থেকে ৫০হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারব ইনশাআল্লাহ।কৃষক ওসমান জানান, তিনি এবছর ৫ বিঘা জমিতে অটো জাতের শিম চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ১ লক্ষ টাকা করে শিম বিক্রি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
একই গ্রামের শিমচাষী নজরুল জানান, বিঘা প্রতি খরচ বাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়। বর্তমানে শিমের আবাদে নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেশি। বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম আবাদ করতে বীজ, সার, বাঁশ, তার, শ্রমিক, সেচ খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ৫০ থেকে ৫৫ দিনে গাছে ফুল ও ফল ধরে। এছাড়াও এ এলাকার অনেকেই আগাম শিম চাষ করছেন তারা হলো- ওসমান ৫বিঘা, মুকুল ২ বিঘা, রওশন আড়াই বিঘা, সিরাজুল দেড় বিঘা, নজরুল ১ বিঘা, নুরুল ১ বিঘা, মকছেদ ১ বিঘা, মান্নান ১ বিঘা এবং মোস্তফা ২ বিঘা শিমের চাষ করছেন।প্রতি কেজি শিম ২০২ থেকে ২০০,২২০,২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার মাজপাড়া চাঁদভা, খিদিরপুর, সড়াবাড়িয়া, মুলাডুলিতে এবং
ধলেশ্বর মাদ্রাসার মার্কেটে শিমের আড়ৎ বসে। পাইকারি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এবছরের প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম ২০০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে এই দামটা চলমান আছে। তারা ঢাকায় পাঠানোর জন্য এই এলাকার শিম সরবরাহ করে থাকেন।
আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সজিব আল মারুফ জানান, বাংলাদেশে যে কয়টি উপজেলা আছে শিম চাষে তার মধ্যে আটঘরিয়া উপজেলা উন্নতম। গ্রীষ্মকালীন আগাম শিম হওয়ার কারনে কৃষক লাভবান হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যে, গ্রীষ্মকালীন এই শিম নিরাপদ ভাবে উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা পুরণ করে দেশের বাহিরে নিয়ে যেতে পারবো উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই চেষ্টা করছে।আগাম শিম আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষকদের নানা ভাবে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গত বছর এই উপজেলায় আগাম জাতের শিম চাষ করা হয়েছিলো ১৫’শ হেক্টর। আর এবছরে চলতি মৌসুমে ১৫’শ ৫৩ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। যা আগের তুলনায় ৫৩ হেক্ট বেশি।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইমস নিউজ