রাজধানী’সহ সারা দেশে তীব্র গরমের মধ্যে নগরবাসীর বাড়তি ভোগান্তি যোগ করেছে লোডশেডিং। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বলেছে, জ্বালানির অভাবেই বাড়ছে লোডশেডিং। তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। তীব্র গরমের মধ্যেই দিনভর লোডশেডিংয়ে শিশুসহ পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে পড়েছেন ভোগান্তিতে। একই অবস্থা হয়েছে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকায়।
ডেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী কাওসার আমীর আলী জানান, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট হলেও উৎপাদন হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার। দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট। প্রকৌশলী আরও জানান, কয়লা ও গ্যাস সংকটে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে তাদের। গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহ্বান জানান তিনি। সেই সাথে ডেসকো সন্ধ্যার পর থেকে যেসব মার্কেট, প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা সেটি তদারকি করবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেছেন, সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর পেছনে অসাধু চক্রের প্রভাবকেও দায়ী করছে তারা। ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আরও জানান, দাম বাড়ালেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। অযৌক্তিক ব্যয় চিহ্নিত করলেও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এ রকম পরিস্থিতি আনার পেছনে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া অবাক করার মত।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য বলছে, কয়লা ও গ্যাস সংকটে গেল এক সপ্তাহে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। এদিকে কয়লা সংকটে ভুগছে পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এরই মধ্যে কয়লা সংকটে সাত দিন ধরে বন্ধ রয়েছে তাপবিদুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে, তা দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চলবে আগামী ৩’রা জুন পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এমন দুর্ভোগের। ডলার সংকটে কয়লার ৩৯০’বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে না পারায় সাময়িকভাবে বন্ধ হওয়ার পথে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, চিন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে ২০২০ সালে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য কয়লা কিনতে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। এতে কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তবে সরকার ১০০ মিলিয়ন ডলারের যোগান দিচ্ছে। এতে নতুন করে কয়লা আমদানি শুরু হলেও কয়লা আসতে সময় লাগবে আরও ২৫ দিন। তাই ৪ জুন থেকে বন্ধ থাকবে পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন।