ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। গেলো মাসে, দেশের চারপাশে ২শ’ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্প হয়েছে, অন্তত ৩০টি। রাজধানীতে রাজউক, রিহ্যাব এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে সেমিনারে বক্তারা বলেন, তুরস্ক-সিরিয়ার পরিণতি ঠেকাতে বিল্ডিং কোড মানতেই হবে। নতুন নিয়ম চালু করার কথা জানায়, রাজউক। অন্য প্রাকৃতিক দূর্যোগের সঙ্গে ভূমিকম্প তফাত হচ্ছে এর পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হয় না। যেমন পাননি তুরস্ক- সিরিয়া সীমান্তের ভূমিকম্প পীড়িত জনগণ। ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ভূমিকম্পে প্রাণহানি এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু একেবারেই যে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়া যায় না তা পুরোপুরি ঠিকও নয়। কেননা গড়ে ১০০ থেকে ৩০০ বছরের মধ্যে সাত কিংবা আট মাত্রার ভূকম্পন নির্দিষ্ট অঞ্চলে ঘুরেফিরে হয়। সেই ঝুঁকিপূর্ণ সময় পার করছে বাংলাদেশ।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, আমাদের এখানে প্রতিমাসে ১০-১২টি ভূকম্পন হয়। আমাদের বাংলাদেশ ও তার আশেপাশের এলাকাতে মোটামুটি বলা হয় আমাদের বাউন্ডারী থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্প হলে আমাদের জন্য সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদেরকে ১৮৭০ সালে, ১৮৮৫ সালে ৭ মাত্রার নিচে ভূমিকম্প হয়েছিল। তার মানে আমাদের লং ওভার ডিউ, যে কোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে।ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই নির্ভর করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কি পরিমাণ আছে। সরকারি এমন তথ্যের ঘাটতি আছে। গেল এক দশকে সারাদেশে ভবনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু ঢাকাতেই বছরে গড়ে একলাখ নতুন ভবন নির্মিত হয়। এই বাস্তবতায় ভবন নির্মাণ অনুমোদনে নতুন নিয়ম চালু করতে যাচ্ছে রাজউক।
রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, বিএনডিসি ২০২০ অনুযায়ী স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ফায়ার ডিজাইন, ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন এগুলো বাধ্যতামূলক করা। আজকের পর থেকে করার জন্যই এ উদ্যোগটা গ্রহণ করেছি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত হওয়া সময়ের দাবি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠান বলেন, বিল্ডিং বলেন রিপেয়ারিং করতে হলে, রিপেয়ারিং করবেন। রেক্টিফাই করলে রেক্টিফাই করতে হবে। আর অবশিষ্ট বিল্ডিং ভেঙে দিতে হবে।
বিল্ডিং কোড মানার সুফল হিসেবে চিলির উদাহরণ দেয়া হয় সেমিনারে, বলা হয় ২০১০ সালে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রাণহানি হয় সাড়ে পাঁচশ। অথচ একইবছর হাইতিতে ৭ দশমিক তিন মাত্রার ভূমকম্পনে মারা যায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।