জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে সমুদ্রর পানির তাপমাত্রা। আর এই তাপমাত্র বাড়ার ফলে আগের তুলনায় বেশি পরিমানে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই বিগত বছর গুলিতে বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে সর্বোচ্চ বিপন্ন দেশ গুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হিসেবে দেখা হয়। ইতিমধ্যেই এখানকার মানুষরা দূর্যোগ মোকাবেলা করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের কারনে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, ঘটছে সম্পদ হানি, অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে দূর্যোগ প্রবন এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার উপর পড়ছে মারত্নক প্রভাব। তাই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা অর্জন করা উচিত।
ঘূর্ণিঝড় কি ?
যখন স্থানে স্বল্প পরিসরে হটাৎ বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং ঐ স্থান একটি নিম্ন চাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ঐ উষ্ণ স্থানের চার পাশের শীতল ও ভারী বাতাস প্রবল বেগে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এই কেন্দ্রমুখী প্রবল বায়ু প্রবাহকেই ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন বলে। এই বাতাস বা ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাটার উল্টোদিকে এবং দক্ষিন গোলোধে ঘড়ির কাটার অনুরূপে প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই ঘূর্ণি ঝড়ের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন- উত্তর আমেরিকায় একে হারিকেন বলে, চীন, জাপান, ফিলিপাইনে এটি টইফুন নামে পরিচিত এবং বাংলাদেশে আমরা একে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলি।
বাংলাদেশে সাধারণত কখন ঘূর্ণিঝড় হয়?
সাধারণত সমুদ্রের তাপমত্রা ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার চেয়ে বেশী হলে সমুদ্র উপরিতলে বায়ুশূণ্যতার সৃষ্টি হয়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় গ্রীষ্মের শুরু অর্থাৎ মৌসুমী বায়ু আসার প্রাক্কালে অর্থাৎ বাংলা: বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য বা ইংরেজীঃ এপ্রিল-মে এবং বর্ষার শেষে অর্থাৎ মৌসুমী বাযু বিদায় কালে বাংলাঃ আশ্বিন-কার্তিক বা ইংরেজী অক্টোবর -নভেম্বর মাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
ঘূর্ণিঝড় কেবল বাতাস নয় থাকে জলোচ্ছাসওঃ
আগেই বলেছি ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্টি হয়। তাই এর সাথে জলোচ্ছাসের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের চাপ খুব কম থাকায় কেন্দ্রের কাছাকাছি সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে এবং জলোচ্ছাসের সৃষ্টি হয়। তাই যখন ঘুর্ণিঝড় স্থলভাগে আঘাত হানে বা অতিক্রম করে কখন ঐ অঞ্চলে জলোচ্ছাসও হয়। আমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় যদি ঘূর্ণিঝড় উপকুলে আঘাত হানে তাহলে জলোচ্ছাসের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ফলাফল মারতœক হয়।
বাংলাদেশ কেন ঘুর্ণিঝড়ের ঝুকিতে ?
আমাদের দেশের অবস্থান পৃথিবীর অপেক্ষাকৃত উষ্ণতম অঞ্চলে । আগেই বলেছি সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়লে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তাই এই অঞ্চলের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা পৃথীবির অন্য অঞ্চলের থেকে বেশী উষ্ণহয় তাই আমাদের দেশ ঘূর্ণিঝড় প্রবন এলাকায় অবস্থিত। ভুললে চলবে না বাংলাদেশের দক্ষিনে আছে বিশাল বঙ্গোপসাগর। বাতাস সাধারণত প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ আছে এমন স্থান পেলে সেখানে ঢোকার চেষ্টা করে। একটু ভৌগলিক অবস্থান বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে আমারে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের জল ও স্থলের অবস্থান ফানেল আকৃতির। ফানেল আকৃতির হওয়ার কারণে মাঝের খোলা জায়গা সব সময় বাতাসকে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য আমন্ত্রন জানায় বা ফলে বঙ্গোপোসাগরের বাতাস স্থলবাগের প্রবাহিত হওয়ায় তীব্রতা অনেক বেশী হয়। এই সকল কারণে আমাদের দেশে সকল সময়ে মারত্নক ঘূর্ণিঝড় ঝুকিতে থাকে। জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে এই ঝুকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
আমরা যাদি ঘূর্ণিঝড়প্রবন অঞ্চলকে আরও নির্দিষ্ট করতে চাই তাহলে দেখবো দেশের উপকুলীয় অঞ্চল বেশী ঘূর্ণিঝড় প্রবন। আমাদের উপকুলীয় অঞ্চলে রয়েছে ১৯টি জেলা। উপকুলীয় জেলা গুলির মধ্যে অন্যতম ঘূর্ণিঝড় প্রবন হলো কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, বরিশাল, পটুয়াখালি, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা।
লেখক: আবু হেনা মোস্তফা জামাল পপলু, সংবাদকর্মী