আজ ১৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তদানীন্তন ভারত উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুনের ঘর আলো করে জন্মগ্রহণ করেন জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। পরিবারের চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাঁদের তৃতীয় সন্তান। সেদিনের টুঙ্গীপাড়ার অজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু।

কিশোর বয়সেই শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা।

বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন।’৪৭-এ দেশবিভাগ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিণত হন।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম চির ভাস্কর হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসর্কোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কালজয়ী নাম।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের তপ্ত বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। কিন্তু বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য নাম এবং বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির সগর্বে উপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ সিংহ পুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।

কবির ভাষায়-
‘‘যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা
গৌরী-মেঘনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।’’

এদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

১৭ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু জন্মস্থান টুঙ্গীপাড়ায় সকাল ১০ টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। পরে তাঁরা বাদ জোহর দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও সেখানে শিশু সমাবেশ, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মাঝে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ , উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শ্রী মুকুল বোস, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম রেজাউল করিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস. এম কামাল হোসেন ও অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া দিনটি উপলক্ষে পরেরদিন ১৮ মার্চ রবিবার বিকেল ৩ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সস্মেলন কেন্দ্র এক আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করবেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ গৃহীত কর্মসূচি দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সংগঠনের সকল শাখাসহ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে