পাবনায় রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এই সমঝোতার মাধ্যমে ভারত প্রথমবারের মতো রূপপুর প্রকল্প নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হলো। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এ সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতার স্মারক সই হওয়ার ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞ এবং রাশিয়ার ঠিকাদারদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি কাঠামো তৈরি হলো।
রুশ বার্তা সংস্থা স্পুৎনিক বৃহস্পতিবার এ খবর জানিয়ে বলেছে, ১৯৯৮ সালে ভারত পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর নয়াদিল্লির ওপর যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল তারপর এই প্রথম দেশটি কোনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করছে। ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের পরমাণু শিল্পের বিকাশ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গিয়েছিল। এ ছাড়া, ভারত এখনো নিউক্লিয়ার সাপ্লাইয়ার্স গ্রুপের (এনএসজি) সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের একটি অত্যাধুনিক প্রকল্পে নয়াদিল্লির অংশগ্রহণকে দেশটির জন্য বড় ধরনের সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রুস এটম এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের পরামাণবিক শক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এই ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়। এ সময় রুস এটমের পক্ষে নিকোলাই স্পাসকি, রাশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম সাইফুল হক উপস্থিত ছিলেন। নতুন এই সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নিরাপদভাবে পরিচালনা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রসহ কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ত্রিপক্ষীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়, পরামর্শক সেবা, কারিগরি সহায়তা, সম্পদ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ও স্থাপন কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ ছাড়া, প্রকল্পের নন-ক্রিটিক্যাল (কম গুরুত্বপূর্ণ) উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারে ভারত। এ ছাড়া জনবল প্রশিক্ষণ, জ্ঞান বিনিময় ও পরামর্শক লেনদেন করবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং ভারতের পারমাণবিক জ্বালানি বিভাগ।
১৯৬০ সালে পাকিস্তান আমলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই উদ্যোগের প্রেক্ষিতে ১৯৬২ হতে ১৯৬৮ সালের মধ্যে পদ্মা নদীর তীরে ঈশ্বরদীর রূপপুরকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দুই দফা সম্ভাব্যতা যাচাই হলেও অর্থের যোগান না থাকায় প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়। এর ভিত্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সমঝোতা স্মারক’ ও ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়। ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে প্রকল্প নির্মাণে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অর্থায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে রাশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চুক্তি সইয়ের আগে ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প গ্রহণের ৫৭ বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারমাণবিক চুল্লি বসানোর জন্য প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুযায়ী এফসিপি উদ্বোধনের দিন হতে ৬৩ মাসের মধ্যে এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে।
নিউজ ডেস্ক, বিডি টাইম্স নিউজ