রিফাত ইসলাম, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি।। করোনা মহামারীর ফলে সৃষ্ট সেশনজট থেকে উত্তরনের পরিকল্পনা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করেছেন উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুব।
আজ রবিবার (০৫/১২/২০২১ইং) একাডেমিক ভবনের ৬ তলায় এ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মোঃ শারাফত আলী, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আবু সালেহ, বিলবস এর সহকারী অধ্যাপক ড. হাসিবুর রহমান প্রমুখ। এসময় শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনে ৪ মাসে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেবার ব্যবস্থা করার বিষয়ে প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীবান্ধব সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। একইসাথে পর্যাপ্ত শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, যথাযথ ল্যাবের সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়ে উপাচার্যের বিশেষ মনযোগ আকর্ষণ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসময় বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, অনুষদ ও বিভাগের স্নাতক ১ম বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর(মাস্টার্স)- এর শিক্ষার্থীরা নানাবিধ সমস্যার কথা উপস্থাপন করেন। এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট; অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পরলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা হেতু কিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখা যাবে এ বিষয়ে উপাচার্যের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রকাশ করবার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। সর্বশেষে, মত বিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে সেশনজট নিরসনের রোড ম্যাপ এর বিষয়ে উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রেজাল্ট ও সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে সেশনজট নিরসনের ক্ষেত্রে ৬ মাসের স্থলে ৪ থেকে ৫ মাসের ভিতর একটি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করবার চেষ্টা করব। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় থেকে যায়। তারমধ্যে তীব্র শিক্ষক সংকট অন্যতম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি শিক্ষক সংকট বেশি থেকে থাকে তাহলে সেটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। তবে ইতিমধ্যে ইউজিসির সাথে এ বিষয়ে আলাপ করেছেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৪-৫ বছরে কাজের থেকে অকাজ বেশি হয়েছে। ইউজিসির নিকট শিক্ষক নিয়োগসহ বাজেট বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়নি। এছাড়াও পর্যাপ্ত ইকুয়েপ্টমেন্ট ও ল্যাব ডেভেলপমেন্ট এর বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে ৬৫ জন শিক্ষকের মধ্যে শুভঙ্কর এর বিপরীতে ২২ জন শিক্ষককে স্থায়ী নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে বিভিন্ন বিভাগের শুন্য পদের ভিত্তিতে বাকিদের নিয়োগের বিজ্ঞাপন করা হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই হয়তো আমরা ৩০-৪০ জন শিক্ষক পাব। এরপরও শিক্ষক সংকট থেকেই যায়। ইতিমধ্যে ইউজিসির নিকট আমরা শিক্ষকের চাহিদা পাঠিয়ে দিয়েছি। উপাচার্য বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অনুপাতের দিক থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় তলানিতে। একজন শিক্ষকের পিছু ৪৩ জন শিক্ষার্থী। যা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০-১২ জনে। ইউজিসির আগে আমাদের প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেবার দরকার ছিল। তবে দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী প্রশাসন এ বিষয়ে সঠিকভাবে আগায়নি।
তিনি আরও জানান, সিনিয়র শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। তবে এ মফস্বল এলাকায় ভালো মানের সিনিয়র শিক্ষক পাওয়া দুষ্কর। তারা শিকড় গজিয়েছে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর মত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেও শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী কুয়েট, খুলনা, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাসিক বেতনের ভিত্তিতে অনলাইন ও অফলাইনে সরাসরি কিছু ক্লাস নেবার ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ক্যাম্পাস ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ