ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সাথে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময়ে শিক্ষক,পুলিশ,সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ও ৩ জন শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে।
রবিবার(২১ নভেম্বর) রাত ৯টা থেকে থেমে থেমে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। রাত ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এব্যাপারে মেডিকেল প্রশাসন থেকে জানানো হয় ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে ৷ অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তা ভিত্তিহীন এবং সংঘর্ষের আসল কারন ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করেই হয়েছে বলে দাবি করেন ৷ এব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানায়, “রাত ৮ টার দিকে মেডিকেল ক্যাম্পাসের ভিতরের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এবং এলাকার কয়েকজন ক্রিকেট খেলতে ছিল ৷ এছাড়াও আমিসহ কয়েকজন খেলা দেখতে ছিলাম ৷ তখনই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (খুব সম্ভবত) তাদের কিছু শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৩০-৪০ জনের মতো যারা খেলছিল তাদের দিকে আসে ৷ তাদের দেখে সবাই খেলা বন্ধ করে দেয় ৷ তখন তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মা-বাপ তুলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে এবং তাদের কিছু শিক্ষক ভিডিও করতে থাকে ৷ এক পর্যায় ব্যাট নিয়ে যায় শিক্ষকরা৷ তারা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের বার বার বলতে ছিল মাদা**দগো মারোস না কেন!! এমন সময় অধ্যক্ষ আমাদের প্রক্টর মহোদয়ের নাম ধরে বলেন ওরে দেখে নিবানে ৷ তোরা মাইরা ওদের ফাঁটাইয়া দে ৷ এতো কিছুর পরও কেউ কোনো উত্তর না দিয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সম্মান রক্ষার্থে সবাই বের হয়ে যাচ্ছিল ৷ তখন আমাদের বড় ভাই অজয় দেবনাথ দাদা (যাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা নেয়া হয়েছে) মেডিকেলের তার এক পরিচিত বড় ভাইকে দেখে আগাইয়া গেলেই তাকে একা পেয়ে মারধর শুরু করে ৷ ততোক্ষনে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯-১০ জনের মতো শিক্ষার্থী মেডিকেলের গেটের বাইরে চলে আসি ৷ অজয় দাদাকে মারধর করতে দেখে তখন আমরা দাদাকে প্রটেক্ট করতে যাই এমন সময় আমাদের ওপর চড়াও হয় মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা ৷ তারপর হাতাহাতি চললে মেডিকেলের স্যারদের হাতে থাকা আমাদের ব্যাট মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের দেয় মারার জন্য ৷ তখন সংঘর্ষ বেড়ে গেলে আমরা পিছাই এবং ইট-পার্টকেল ছোড়া শুরু করি ৷ কয়েক দফা এটা চলে তখনই ৷ তারপর ধীরে ধীরে ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের অবস্থান ওখানে বাড়ে ৷ পরবর্তীতে আবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয় ৷” তিনি বলেন, “মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের ইভটিজিং বা এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি ৷ উল্টো তাদের শিক্ষকরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয় ৷ এক মেয়েকে ডেকে নিয়ে হেনস্তা করে এবং তার ছবি তুলে রাখে ৷ সে হিসেবে ইভটিজিং তারা করেছিল ৷
” তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় নবীনবাগে (মেডিকেল সংলগ্ন) বেশীরভাগ শিক্ষার্থীরা মেস বা বাসা ভাড়া করে থাকে ৷ এজন্য তাদের এসব জায়গায় আসা-যাওয়া অবস্থান বেশী ৷ তাদের (মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের) সমস্যা যেহেতু হচ্ছে মেডিকেল প্রশাসন অফিশিয়াল নোটিশের মাধ্যমে আমাদের সতর্ক করে দিলেই পারতো ৷ এভাবে অমানবিক আচরন করে হামলা করে সাজানো নাটক করার কোনো প্রয়োজন ছিল না ৷” এদিকে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বিষয়টি মিটমাট হয়েছে বলে দাবি করে বলেন, “আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উভয় প্রতিষ্ঠান আলোচনায় বসেছিলাম এবং বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে। আপাতত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।”
ক্যাম্পাস ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ