ছোট্র একটি ফল, নাম তার  মেস্তা। এ ফলটিকে অনেক মানুষই  চেনেন না। এ ফলটি গাঢ় লালবর্ণের টক স্বাদযুক্ত ও জলপাই সবুজ রঙিন পাতার উপগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। অনেকে এই ফলটিকে মেস্তাগুডা বা চুকাই নামে চিনে বা ডেকে থাকে।এর ইংরেজি নাম রোজেল ও সরেল।  আফ্রিকা মহাদেশে  ফলটির আদি নিবাস। বর্তমানে এ ফলটিকে বাংলাদেশের বহু জায়গায় দেখতে পাওয়া যায়। তদ্রুপ কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা নামে খ্যাত অষ্টগ্রামে এই টকজাতীয় ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। এ মেস্তাগুডা  ফলটি চাষ করে এখন অনেকে লাভবান হচ্ছেন, তাদের মাঝে একজন হলেন  পূর্ব অষ্টগ্রামের সমীর দেব।

মেস্তা যেমন ফল, তেমনী আবার সবজিও। দৃষ্টিনন্দন এ সব্জি শীতকালীন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানাবিধ নামে পরিচিত। যেমন  হইলফা, অম্বলমধু, চুকুর, মেডস, চুক্কাগুডা, মেস্তাগুডা, চুকাই, চুকাপাতা, টেঙ্গাপাতা ইত্যাদি।  এ ফলটি পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে বেশ প্রসিদ্ধ।  এ ফলের মাঝে হরেক রকম ওষুধি গুণ রয়েছে।  মুখরোচক জ্যাম-জেলি তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় এই মেস্তাগুডা। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে মেস্তাপাতা ভেষজ চা হিসেবে খাওয়া হয়, এ রকমটাই জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বাংলাদেশে ভর্তা ও তরকারি রান্নায় ব্যবহৃত হয় মেস্তা। এই মেস্তাগুডা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, এটি মূত্রবর্ধক, মৃদু কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ, ক্যানসার ও স্নায়ু রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ক্যারোটিন ও প্রোটিনসহ পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন।

আমড়া, জলপাই, তেঁতুল, ডেউয়া, সাতকরা ফলের বিকল্প হিসেবে মেস্তাগুডা ও মেস্তাপাতা দিয়ে খাট্টা বা টক রান্না করা হয়। মেস্তাগুডার গাছের আঁশ পাটের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়াও এ ফলের  বীজ হতে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা যায়। বিশ্বস্থ সুত্রে পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের নরসিংহ দেব আখড়ার পুকুরপাড়ে চাষ করা মেস্তাগুডা সম্পর্কে জানা যায় ,সমীর দেব নামে একজন  ৮ শতাংশ ঢালু জায়গায় মেস্তাগুডা চাষ করেছেন।   তিনি ১ হাজার টাকায় জমি পত্তন নিয়ে  ঐ জমিতে মেস্তাগুডা চাষ করেছেন। । চারা ও যত্নসহ খরচ করেছেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা।সমীর দেব ইতিমধ্যে চাষকৃত মেস্তাগুডা  ৯০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে  ৯ হাজার টাকার মেস্তাগুডা বিক্রি করেছেন। সমীর দেব জানান, এবার তার লক্ষ্য১৫-১৮ হাজার টাকার মেস্তাগুডা বিক্রি করা।  মেস্তাগুডা বিক্রির পর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন।

১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বীজ বপন বা চারা রোপণ করার ভালো সময় ধরা হয়। ঢালু জায়গা, পুকুর, বাড়ি ও পরিত্যক্ত জায়গা বেছে নিয়ে সেই সাথে  জমিতে পানিনিষ্কাশনর উপযুক্ত নালা রেখে মেস্তাগুডার বীজ ও গাছ রোপণ করতে হয়। এ ছাড়া জমিতে চাষ-মই দিয়েও মেস্তাগুডা বপন করা হয়। চারা রোপণের ১৩০-১৪০ দিনের মধ্যে  ফুল আসে ও  ফল ধরে। এ বছর অষ্টগ্রামে প্রায় ১০ একর জমিতে মেস্তাগুডা চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের মতে, এ ফলের চাষ করা হয়েছে সাড়ে ৭ একর জমিতে। কম যত্নে অধিক পুষ্টি ও ওষুধিগুণে ভরা মেস্তাগুডা উঠানে চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ও আয় করেন থাকেন উপজেলার নারীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘চুকাই একটি সম্ভাবনাময় সবজি। এটি ব্যাপকহারে চাষ করলে কৃষকেরা  স্বাবলম্বী হবে বলে তিনি মনে করেন। । মূল জমির বাইরেও পরিত্যক্ত জায়গায় চুকাই চাষ করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব। আর এ ফল চাষে আমরা উৎসাহী কৃষকদের সহায়তা করে থাকি।’

কিশোরগঞ্জ জেলা নিউজ।। বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে