কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।। কুষ্টিয়ায় আলোচিত রাশেদ হত্যা মামলায় আসল আসামির বদলে নকল আসামিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মামলার সাক্ষীরা আদালতে দাঁড়িয়ে আসামিকে ভুয়া বলে শনাক্ত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৬ জুন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার চরদিয়ার কল্যাণপুর দরবার শরীফে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৮) নামে এক ভক্তকে মোবাইল চুরির অপরাধে দরবার শরীফের লোকজন ওই দরবার শরীফের বাগানের মধ্যে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। নিহত রাশেদ দৌলতপুর উপজেলার হরিণগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। রাশেদ ওই দরবার শরীফের মুরিদ ছিলেন এবং ঘটনার ৪-৫ মাস আগে থেকেই ওই দরবার শরীফে বসবাস করতেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় স্থানীয় চরদিয়াড় দরবার শরীফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দৌলতপুর থানা পুলিশ ৬ জন আসামিকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মামলার প্রধান আসামি চরদিয়াড় দরবার শরীফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদসহ তার ভক্ত অনুসারীরা আত্মগোপন করেন। তাছের আহমেদ দৌলতপুর উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের মৃত আজের প্রামাণিকের ছেলে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকায় গত ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আদালতে ওই দরবার শরীফের মুরিদকে কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। সম্প্রতি আসল তাছেরের পরিবর্তে নকল তাছের সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। সেই সাথে আদালত পাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র পরিদর্শক মো. সেলিম জানান, মামলার সাক্ষীরা আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি চরদিয়াড় দরবার শরীফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ নন, তাছেরের বদলে অন্য কাউকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে এমন দাবি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দৌলতপুর, কুষ্টিয়া আমলী আদালতে আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। ওই দিনে কয়েক জন সাক্ষী আদালতের সামনে উক্ত আসামিকে নকল তাছের বলে দাবি করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামির তিন দিনের রিমান্ড মন্জুর করেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে আদালতে যিনি তাছের হিসেবে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে তাছের নন; অন্য কেউ। বুধবার থেকে আসামির রিমান্ড শুরু হবে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। মামলার সাক্ষী রেজা জানান, সোমবার তাছের নামের ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা হলে তারা (সাক্ষীরা) মুখ দেখে তিনি প্রকৃত তাছের নন বলে আদালতকে জানান। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তি ওই দরবার শরীফেরই একজন ভক্ত।
এদিকে আদালতের একটি সূত্র জানায়, আদালতের কাছে আত্মসমর্পণের সময় তাছেরের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সাক্ষীরা জানান, তাছেরের ছবির জায়গায় কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ব্যক্তির ছবি বসিয়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের আসল জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।
কুষ্টিয়া নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইম্স নিউজ