জহির সিকদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা।। আর কয়েক সপ্তাহ পরই সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শায়দীয় দুর্গোৎসব আরম্ভ হতে চলেছে । এই উৎসবকে ঘিরে জেলায় পুরোদমে চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। প্রতি বঢ়রের মত এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমজমাট ভাবে এই উৎসব পালন করা হবে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন । তবে করোনার কারণে গতবারের মতো এবারও আনন্দ উৎযাপনে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। পূজা উৎসবে যেমন করোনার প্রভাব পড়েছে তেমনি প্রভাব পড়েছে প্রতিমা কারিগরদের উপর।
পূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরির ধুম পড়লেও মূল্য নিয়ে হতাশা রয়েছে কারিগরদের মধ্যে। জেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৫০০ মত মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা হবে। সে লক্ষ্যে প্রতিমা কারিগররা বিভিন্ন পূজা মণ্ডপসহ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রতিমা তৈরির প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সরেজমিনে জেলা শহরের কান্দিপাড়া পাওয়ার হাউজ রোড আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সারিসারিভাবে প্রতিমা দাঁড় করানো আছে। দেবী দুর্গার সঙ্গে রয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষী সরস্বতী । এখন পর্যন্ত মুখমণ্ডলসহ দেহের অবয়ব গঠন করা হয়েছে। বাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারী কিশোরারও এ কাজে অংশ নিচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে এই প্রতিমাগুলো শুকানোর কাজ চলছে। আর কিছুদিনই পরেই রং তুলির আঁচড়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে প্রতিমাগুলো। এ নিয়ে কথা হয় আখড়াবাড়ী প্রতিমা কারিগর মন্টু রুদ্র পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার ৩২টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। সময়মত এসব প্রতিমা মণ্ডপে পৌঁছে দিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। তবে করোনা আগে প্রতিটি প্রতিমা তৈরি করতে ৪০-৫০ হাজার টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু চলমান পরিস্থিতির কারনে প্রতিমার মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য বছর প্রতিমার ভাল মূল্য পেলেও এবার তেমন ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে না।
আখড়াবাড়ীর আরেক কারিগর রবীন্দ্র পাল বলেন, তেমন বেশি লাভ না হলেও বাপ-দাদা ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। দুর্গা পূজা ছাড়াও বিভিন্ন পূজার প্রতিমা তৈরি করে থাকি। পূজাকে সামনে রেখে আটটি প্রতিমার কাজ পেয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা পাব। কারিগর রঞ্জন রুদ্র পাল বলেন, আমাদের হাতের তৈরি প্রতিমা কেনার জন্য জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসছেন।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে আসা প্রতিমা তৈরির শ্রমিক অপ রুদ্র পাল বলেন, আমরা প্রতিমা তৈরির জন্য দুই মাস আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছি। প্রতিদিন কাজ করে গড়ে দৈনিক ৫০০ টাকা মুজুরি পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ১৭ টি প্রতিমা তৈরির কাজে অংশ নিয়েছি। জাতীয় হিন্দু মহাজোট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রবীর চৌধূরী রিপন বলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় দূর্গা পুজার প্রস্তুতি আমাদের প্রায় সম্পন্ন।আমাদের প্রতিমা তৈরীর কাজ চলছে। এই পুজার সাথে বাঙ্গালীর ঐতিহ্য জড়িত রয়েছে।আমরা শান্তিপুর্ন ভাবে এই দূর্গোৎসব পালন করতে সকলের সহযোগিতায় চাই।
পূজা উদযাপন পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সহ সভাপতি সুবোধ চন্দ্র দাশ বলেন, জেলায় এ বছর প্রায় সাড়ে ৫০০ মণ্ডপে দুর্গোউৎসব অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনা পরিস্থির কারণে প্রতিটি মণ্ডপে যেন স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত থাকে সেজন্য পূজা মণ্ডপ কৃর্তপক্ষদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। হিন্দু ধর্ম অবলম্বী পুরোহিতরা বলেন। পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোটকে করে। আর গমন করবেন দোলায় চড়ে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানান, পূজা মণ্ডপগুলোর প্রচুর নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিউজ ডেস্ক।।বিডি টাইমস নিউজ