কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের নিজস্ব সম্পত্তির উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্নার ও গাছ কর্তন করে কুষ্টিয়া সওজ বিভাগ ভবন নির্মাণের জন্য হানা দিয়েছে বলে জানা গেছে। গণপূর্ত যে সম্পত্তির উপর গাছ লাগিয়েছে, সেই সম্পত্তিতে ভবন নির্মাণের জন্য সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। শুধু তাই নয় গণপূর্ত অধিদপ্তর উক্ত স্থানে দর্শনীয় বঙ্গবন্ধু কর্ণারও স্থাপন করেছে। একই জায়গার মালিকানা দাবি করছে সরকারের এ দুটি প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। এদিকে বন বিভাগের কোনো অনুমতি ছাড়াই ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে গাছ কাটার আয়োজন প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পরিবেশবাদীদের মধ্যে।

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের সাদ্দাম বাজার মোড় এলাকায় কুষ্টিয়া সড়ক ভবন ও গণপূর্তের কার্যালয়। একসময় সরকারি এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল সিএন্ডবি অফিসের আওতায়। ভাগাভাগি হওয়ার পর সরকারি এ জমি দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রেকর্ড হওয়ার কথা থাকলেও ভুলক্রমে তা সড়ক বিভাগের নামে হয়ে যায়। গণপূর্তের সে সময়কার কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জমি রেকর্ড হয় সড়কের নামে।

তবে এ ক্যাম্পাসের সব অফিস গণপূর্তের নামে। এমনকি যে ভবনে সড়কের অফিস আছে, সেটিও গণপূর্তের ছিল একসময়। পরে সড়কের ব্যবহারের জন্য দোতলা ভবনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। সওজ বিভাগ বেশ কয়েক বছর আগে কোটি টাকা খরচ করে দোতলা ভবনটি ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে তিনতলায় রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া সওজের আরেকটি অফিস রয়েছে শহরের চৌড়হাস মোড়ে, সেখানে সওজের কয়েক একর খালি জমি ও জলাধার রয়েছে। সেখানে আছে কোয়ার্টার। সিএস রেকর্ডে জমির মালিকানা ছিল সিঅ্যান্ডবির। পরে আরএস রেকর্ডে পুরো জমির মালিকানা চলে যায় সওজের নামে। সড়ক বিভাগের দাবি অনুযায়ী, তারা জমির খাজনা দেয়। আর গণপূর্তের নথি বলছে, তারা পৌরকর দিয়ে আসছে। কাগজে এ জমির মালিকানাও তাদের নামে। সিএস রেকর্ডে জমির মালিকানা ছিল সিঅ্যান্ডবির। তবে ভবনগুলো সবই গণপূর্তের। আর ক্যাম্পাসের যে বিশাল বাগান আছে, সেটিও গণপূর্তের লাগানো। বাগানে গাছের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর। বাগানে সব মিলিয়ে তিন শতাধিক গাছ রয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিরুল ইসলাম কুষ্টিয়া গাছ কেটে ভবন করার বিষয়ে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের সব জমির মালিক সড়ক বিভাগ। আমাদের নামে জমির রেকর্ড রয়েছে। নিয়মিত খাজনা দিয়ে আসছি। আমাদের জমিতে আমরা ভবন করছি, এতে তো কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গণপূর্ত এর আগে মামলা করলেও আদালত তা খারিজ করে দেন। নতুন করে একটি মামলা চললেও আদালত কোনো আদেশ দেননি। চলতি মাসের ১৯ তারিখ শুনানির সময় নির্ধারণ রয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের জায়গায় গাছ লাগানো। আমরা গাছ কাটব, এখানে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

গণপূর্তের কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে ঢুকতে তৈরি করেছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার, ফলজ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের যে বিশাল বাগান, এটি তাঁদের করা। শহরের মধ্যে এ ধরনের বাগান আর নেই। চৌড়হাসে সড়ক বিভাগের অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে। সেখানে সড়ক ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যার ভেঙ্গে অক্সিজেন কর্তন করে ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। কয়েক বছর আগেও চৌড়হাসে সওজের প্রস্তাবিত সড়ক ভবনের সাইনবোর্ড ছিল। আর তাদের তিনতলা ভবন তো রয়েছেই, নতুন করে ভবন করার কোনো প্রয়োজনই নেই। এতে সরকারের অর্থের অপচয় হবে, ভবনটি নষ্ট হবে।

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, পুরো ক্যাম্পাসের জায়গার পৌরকর তাঁরা দিয়ে আসছেন। এখানকার সব ভবন তাঁদের। যে বাগানে সড়ক ভবন করার জন্য সাইনবোর্ড দিয়েছে, সেটিও তাঁদের। বাগানটি নষ্ট না করেও ভবন করা যায়। সওজের আলাদা জায়গা রয়েছে। প্রতিকারের জন্য গণপূর্ত আদালতে গেছে। সুন্দর একটি সমাধান হওয়া দরকার।

এদিকে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই গাছ কাটার টেন্ডার করেছে সড়ক বিভাগের রাজশাহী অপারেশন ডিভিশন। বন দপ্তরের ২০১১-এর বিধি-৫ মোতাবেক ফরম ৩-এ গাছ কর্তন, অপসারণ ও পরিবহনের জন্য বন বিভাগ বরাবর আবেদন করতে হবে। অনুমতি না নিয়ে সড়ক বিভাগের রাজশাহী অফিসের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফিরোজ গাছকাটার দরপত্র আহ্বান করেছেন। জানতে চাইলে প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, জায়গা নিয়ে মামলার বিষয়টি জানা নেই। সওজের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গাছকাটার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে যদি আদালতের কোনো বিধিবিধান থাকে এবং সেই ধরনের কোনো চিঠি থাকে, বিষয়টি দেখা হবে।

কুষ্টিয়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সালেহ মো. সোয়েব খান বলেন, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী বন বিভাগ গাছ কাটার বিষয়ে সবকিছু করবে। এ ব্যাপারে সওজ কোনো কিছুই জানায়নি।

পরিবেশবিদ খলিলুর রহমান বলেন, কোনো কিছু করতে হলেই কেন গাছ কাটতে হবে। সরকার গাছ লাগানোর কথা বলছে, অথচ সরকারের দপ্তরেই গাছ কাটার আয়োজন চলছে। এমনটা হলে দুঃখজনক। গাছে প্রচুর পাখি বসবাস করে। বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা ভালো। কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) আক্তারুজ্জামান মাসুম বলেন, ‘আদালতে গণপূর্ত থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে শুনানি হবে। কিছু ডকুমেন্ট চেয়েছি। যেখানে ভবন হবে, সেখানে বাগান আছে। তাই দুই দপ্তরের কর্মকর্তারা বসলে এর সহজ সমাধান হয়ে যায়।’

কুষ্টিয়া নিউজ ডেস্ক।। বিডি টাইমস নিউজ 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে