জহির সিকদার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি।।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় যাত্রীবাহি ট্রলারের সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ১৭জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ১৭টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরও করা হয়েছে। নিহত ১৭জনের মধ্যে একজন যুবক। বাকিরা সবাই নারী ও শিশু ।
নিহতরা হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলা বেগম, দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮) ও চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়গর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) এবং তার মেয়ে মুন্নি (১০) ও আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের (৪৫)। বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়ন বাদেহাড়িয়া কামাল মিয়ার শিশু মেয়ে মাহিদা আক্তার (৬), একই উপজেলার মনিপুরের মৃত আব্দুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮)।
বিজয়নগর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মির্জা মোহাম্মদ হাছান ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম ২১ জনের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।এর আগে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে উপজেলার লইছকা বিলে এই ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ট্রলারের যাত্রী আঁখি আখতার জানান, ট্রলারটি বিজয়নগরের চম্পকনগর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টায় অন্তত ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসে। তিনি বলেন, এই নৌকায় আমি, আমার ছেলে, ভাশুরের ছেলে ও শাশুড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসছিলাম। পথে একটি বালু বোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে যায়। আমি সাঁতরে উঠতে পারলেও আমার ছেলে, ভাশুরের ছেলে ও শাশুড়ির এখনও সন্ধান পাইনি।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন জানান, ‘জেলা সদর হাসপাতালে মরদেহ গুলো নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করতে এখানে এসেছেন। শনাক্তের পর মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে’।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম জানান, ‘নৌকা ডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশুর মরদেহ রয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলমান আছে। রাতে উদ্ধার কাজে কিশোরগঞ্জ থেকে ডুবুরি দল উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে’। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নৌকা ডুবির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।