মাসুদ রানা,মেহেরপুর প্রতিনিধি।। মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামে করোনাকালীন সময়ে মানুষের ফ্রী সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে উপহার দিলেন সৌদি প্রবাসী ও বাংলাদেশের সেরা করদাতা আমিনুল ইসলাম আমিন।
করেনাকালীন মুহূর্তে দ্রুত হাসপাতালে নিতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় রোগীর পরিবারদেরকে। কিন্তু সেটি যদি গ্রামের বেলায় এসব চিন্তা সুদূরপ্রসারী। সঠিক চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। তখন রোগীকে হয় পথেই মরতে হয়, না হয় হাসপাতালে নিলেও অবস্থা সংকটে চলে যায়। এমন উপলব্ধি থেকেই মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে সৌদি প্রবাসী ও বাংলাদেশের সেরা করদাতা আমিনুল ইসলাম আমিন গ্রামবাসীর চিকিৎসায় একটি অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিলেন। শুধু করোনা রোগীই নয়, গ্রামের যেকোনো রোগীই হাসপাতালে যেতে বিনামূল্যে ব্যবহার করবে প্রবাসীর দেওয়া উপহারের এই অ্যাম্বুলেন্স।
আজ দুপুরে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গ্রামের মসজিদের ইমাম ও মাতবরদের হাতে অ্যাম্বুলেন্সের চাবি ও অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন তিনি। তাছাড়া প্রতি মাসের জ্বালানি ও চালকের বেতনও কিছু প্রদান করবেন মানবিক ওই প্রবাসী। তার দেওয়া অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। এমন মানবিক উপহার সংকট মুহূর্তে মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সৌদিপ্রবাসী ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুর সদর থেকে আমাদের গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অটোভ্যানে যেতে অনেক সময় লাগে। দ্রুত হাসপাতালে না পৌঁছাতে পেরে অনেক রোগীর পথেই মৃত্যু হয়। গ্রাম থেকে দূরের কোনো হাসপাতালে যেতে হলে ভাড়াটে মাইক্রো বা সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। তাও আবার সঠিক সময়ে পাওয়া মুশকিল। এই এম্বুলেন্স আমার কোন কর্তৃত্ব থাকবেনা গ্রামবাসীরা একটি কমিটির মাধ্যমে পরিচালনা করবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মেহেরপুর জেলায় করোনা রোগী দিন দিন বাড়ছে। এ সময় আমাদের গ্রামের মানুষ যাতে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারে, তাই একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হলো। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। গ্রামের মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আমার এ উপহার অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
গ্রামের যুবক মাসুদ রানা বলেন, আমাদের গ্রামের ছেলে আমিনুল ইসলাম আমিন তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে বসবাস করেন। তিনি সৌদি আরবে গিয়ে সাবলম্বী হন। তার কাছে গ্রামবাসীকে দাবি করা করেনি তিনি নিজেই এ দুর্যোগ মুহূর্তের কথা চিন্তা করে একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিলেন। তার এ উপহার সময় উপযোগী হিসেবে এলাকার সব মানুষের দুঃসময়ে উপকারে আসবে।
মসজিদের ইমাম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ আছে, যারা ভাড়ার অভাবে জরুরিভাবে হাসপাতালে যেতে পারে না। আমিনুলের দেওয়া উপহারের অ্যাম্বুলেন্স তারাসহ এলাকার মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা পাবে। এ উপহার আমাদের জন্য অনেক বড় উপহার। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. সজিব উদ্দিন সাধিন বলেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক মানুষই প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে, বিশেষ করে স্ট্রোকজনিত। রোগীর ক্ষেত্রে সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোগী পরিবহনে আমিনুল ইসলাম গ্রামবাসীদর জন্য ভালো একটি কাজ করছেন, যা এলাকার সব মানুষের মানবিক কাজে আসবে। এলাকার প্রত্যেক বিত্ত্ববানকে এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন এ চিকিৎসক।
পিরোজপুর ইউপি সদস্য আরমান আলী বলেন, করোনাকালীন কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে খুব কষ্টের মধ্যে পড়েছে রোগীর পরিবার। আমিনুল ইসলাম দূর থেকে বিষয়টি উপলব্ধি করে মহৎ কাজটি করছেন, তা অবশ্যই ভালো কাজ। প্রতিটি গ্রামে একটি করে অ্যাম্বুলেন্স থাকলে মানুষের আর কষ্ট থাকবে না।