শুধু কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে শত শত কোটি টাকা ঋণ দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, নিজেও প্রতিষ্ঠান খুলেছেন ভুয়া ঠিকানা দিয়ে। আর সেই কাগুজে কোম্পানির ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছেন বেসিক ব্যাংকের বিতর্কিত চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু। যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে মিলেছে স্টান্ডার্ড চ্যার্টাড ব্যাংকে বাচ্চুর রহস্যজনক লেনদেনের তথ্য। এই টাকা বেসিক ব্যাংকে ঋণ লোপাট করা অর্থের কিছু অংশ বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ঋণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে সম্প্রতি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু। সেখানে নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।তবে তিনি অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করলেও, যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে মিলেছে খোদ বাচ্চুর নামে অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেনের তথ্য। চেয়ারম্যান হওয়ার পর ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইডেন ফিশারিজ লিমিটেড নামে কোম্পানি খোলেন বাচ্চু। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টকের তথ্য বলছে, ইডেন ফিশারিজের চার পরিচালক হলেন শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। কোম্পানির ঠিকানা দেয়া হয় ৪২/১-ক, জাহান প্লাজা, সেগুনবাগিচা।
অনুসন্ধান সূত্রঃ যমুনা নিউজ
অনুসন্ধানে জানা গেলো, নিজের কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রেও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন বাচ্চু। উল্লিখিত ঠিকানায় আদৌ বাচ্চুর কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না কখনো। এ বিষয়ে জাহান প্লাজার মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইডেন ফিশারিজ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের ভবনে কখনো ছিল না।’ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করা কাগুজে প্রতিষ্ঠান ইডেন ফিশারিজের নামে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একাউন্ট খুলেছিলেন বাচ্চু। যেখানে ২০১৩ সালের ২ মে ১০টি চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা করে ৫ কোটি টাকা তোলেন তিনি। একদিন পর উত্তোলন করেন আরও এক কোটি টাকা। আবার ঐ দিনেই দু’জন ৫০ লাখ টাকা করে নগদ জমা দেন ১ কোটি টাকা।
অনুসন্ধান সূত্রঃ যমুনা নিউজ
তারপর ১৬ মে দু’টি চেকের মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা তোলেন ইডেন ফিশারিজের মালিক। ঐদিনই দু’টি চেকে ৫ কোটি টাকা জমা হয় ঐ একাউন্টে। একদিনে ৯ কোটি টাকাসহ মাত্র কয়েক মাসে ৩০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে বিস্মিত বিশেষজ্ঞরা।টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এত স্বল্প সময়ে এত বড় অংকের টাকা ক্যাশে লেনদেন অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে লেনদেন হয়েছে যে ব্যাংকের মাধ্যমে সেই স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের দায়িত্ব ছিল বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এই প্রতিষ্ঠানগুলোরও দায়িত্ব ছিল। এছাড়া দুদকের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছিলো।
২০১৩ সালেই তখনকার চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর সম্পৃক্ততায় হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ লোপাটের ঘটনা বহু দিন ধরে ছিল ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’। দিনের পর দিন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও বাচ্চুর একাউন্টে রহস্যজনক লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি স্ট্যান্ডর্ড চাটার্ড ব্যাংক। অবশ্য এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বিদেশি ব্যাংকটির শাখা প্রধান।যোগাযোগ করা হলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক আমিনা জেসমিন রাজ্জাক বলেন, এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে পারবো না। পাবলিকলি কথা বলার এখতিয়ার নেই। ব্যাংকের করপোটের অ্যাফেয়ার্স বিভাগকে জানালে তারা বলতে পারবেন।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যদি কোনো লেনদেনকে সন্দেহজনক মনে করে বা মনে করার কারণ থাকে এবং এরপরও এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট না করে থাকে তাহলে সেটি অনৈতিক।
সূত্রঃ যমুনা নিউজ
অনলাইন ডেস্ক
বিডি টাইমস নিউজ