চার বাংলাদেশিকে ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ (রিয়েল লাইফ হিরো) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব মানবতা দিবস উপলক্ষে মানবিক সহায়তার সম্মুখযোদ্ধাদের এ সম্মান দেওয়া হয়েছে।

মানবিক কাজে অনুপ্রেরণা জোগাতে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ) তাদের বুধবার এ স্বীকৃতি দিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। স্বীকৃতি পাওয়া এই চারজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত, ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নুর ও দারিদ্র্য জয় করে সাবলম্বী হয়ে ওঠা আঁখি। রিজভী হাসান সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সামাজিক সমস্যাকে উপলব্ধি করে ভবনের নকশা তৈরিতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। প্রকৌশলী রিজভী বস্তিতে থাকা মানুষের চাহিদার দিকে খেয়াল রেখেছেন, যাতে তাদের উপযোগী করে ভবনের নকশা তৈরি করা যায়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের কাজ করেন তিনি।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হন রিজভী। তিনি সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য কম খরচে নিরাপদ স্থাপনা তৈরি করতে শুরু করেন। এসব স্থাপনায় রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা নারীদের কাউন্সেলিংসহ দক্ষতা উন্নয়নের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ব্যতিক্রমী এসব স্থাপনার মাধ্যমে বহু নারীকে নিরাপদে সেবা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারছে ব্র্যাক ও ইউনিসেফ।

বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া তানভীর হাসান সৈকত ত্রাণ তৎপরতায় রেখেছেন অনন্য অবদান। গত মার্চে বাংলাদেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে যেতে শুরু করলে তানভীর ও তার সঙ্গীরা সেখান থেকেই প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেন। গত এপ্রিলের শুরু থেকে ঢাবি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) টানা ১১৬ দিন ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার সহায়তা দিয়েছেন তিনি। এরপর সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা করতে সেখানে যান তানভীর। যে কোনো সংকটের সময় খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের মতো তথ্য ও যোগাযোগের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ তথ্য ও যোগাযোগ হতে হয় জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায়। এ ক্ষেত্রে একজন অনুবাদকের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংকটের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন বাস্তব জীবনের আরেক নায়ক অনুবাদক সিফাত নুর।

২০২০ সালের মার্চে ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডারস নামের একটি সংস্থায় কাজ শুরুর পর এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি বিদেশি শব্দের বাংলা অনুবাদ করেছেন তিনি। আইএফআরসি ও ইউএনএইচসিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার হয়ে এ অনুবাদের মাধ্যমে সিফাত অনেক মানুষের কাছে জীবনরক্ষাকারী তথ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন। তার অনুবাদের মাধ্যমে সম্প্রতি করোনা মহামারিতে বহু মানুষ নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখতে পেরেছেন।

করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশি তরুণী আঁখি সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএ বলেছে, বাংলাদেশের অনেক শিশুর মতোই একসময় শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাকে পুনর্বাসনে সহায়তা করে। বয়সের কারণে স্কুলের পড়াশোনা শেষ না হলেও সেলাইকাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। একটি সেলাই মেশিন ও কিছু কাপড় তাকে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই তিনি নিজের গার্মেন্ট কারখানা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।

বর্তমানে মা ও বড় বোনের সহযোগিতায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন আঁখি। দারিদ্র্য কাটিয়ে নিজেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে যখন মাস্ক-সংকট দেখা যায়, তখন তা তৈরি করতে শুরু করেন আঁখি। কম দামে দরিদ্র মানুষের কাছে সেসব মাস্ক পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে