তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে ফের আলোচনার গুঞ্জন উঠেছে। শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। এমন খবরে নড়েচড়ে বসেছেন চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন পার্বত্য জেলার সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, গত মার্চেই রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করে তা প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসায় সরকারি কর্মকাণ্ডেও গতি ফিরছে। এতে দীর্ঘদিন আগে মেয়াদোত্তীর্ণ এ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে মনোনয়ন পেতে রাঙ্গামাটিতে লবিং-তদবির নিয়ে তৎপর হয়ে উঠছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান দায়িত্বসীন বৃষ কেতু চাকমা, বর্তমান সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরী, সাবেক সদস্য সুবির কুমার চাকমা ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপক বিকাশ চাকমার নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে যে কেউ চেয়ারম্যান হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদের পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টর সদস্য হিসেবে এলাকায় ব্যাপক জনস্বার্থে কাজ করায় দীপক বিকাশ চাকমার জনপ্রিয়তাও যথেষ্ট বলে শোনা যাচ্ছে। ১৪’সদস্যের মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মানিক্য কিশোর চাকমা, লংগদুর বাবু দাশ, জুরাছড়ির প্রবর্তক চাকমা, নানিয়ারচরের এলিপন চাকমাসহ অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় কর্মকাণ্ডে মানিক্য কিশোর চাকমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথাও বলা হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ প্রত্যেক পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্য নিয়ে পরিষদ তিনটি পুনর্গঠন করে সরকার। এসব পরিষদে রাঙ্গামাটিতে বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়িতে কংজুরী চৌধুরী ও বান্দরবানে ক্যশৈ হ্লা মনোনীত চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন। তাদের পাঁচ বছর মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, শাখা ও সহযোগী নেতাকর্মী অনেকের মতে, এবার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদস্য পদে ত্যাগী, যোগ্য ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। তারা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চান সদর উপজেলা থেকে। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী দীপক বিকাশ চাকমা বলেন, আমি দল ও স্কয়ারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণœ রাখতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের পরামর্শে যতদূর সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাকে মূল্যায়ন করা হলে আত্মনিবেদিত হয়ে দায়িত্ব পালন করব।

বর্তমান চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, আমরা দায়িত্বে আছি। সরকার নতুন পরিষদ পুনর্গঠন করলে চলে যাব। আমাকে থাকতে বললে থাকব। আমরা এখন তার অপেক্ষায়।চেয়ারম্যান পদে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান সদস্য অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, দল যদি আমাকে চেয়ারম্যান পদে মূল্যায়ন করে, আমি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য জননেতা দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে রাঙ্গামাটিতে দলকে শক্তিশালী করতে যথাসাধ্য ভূমিকা পালনের চেষ্টা করব।

সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, আমি পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলাম। জনগণ ও দল আমার কর্মকাণ্ড দেখেছে। তবে পরিষদ তিনটির নির্বাচন হওয়া জরুরি। আর মনোনীত পরিষদ পুনর্গঠন করা হলেও দলের গ্রহণযোগ্য, সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিবেচনায় আনা দরকার বলে মনে করি। এদিকে আইনে মেয়াদ শেষে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদস্যদের নির্বাচিত করার কথা থাকলেও গত ৩০ বছরেও নির্বাচন দেয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজ দলীয় লোকদের মনোনীত করে পরিষদ তিনটি পুনর্গঠন করে আসছেন ক্ষমতাসীনরা। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন এ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রথম ও শেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । সেই থেকে পরিষদ তিনটি পরিচালিত হয়ে আসছে নির্বাচন ছাড়াই সরকার মনোনীত লোক দিয়ে।

নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে