বাংলাদেশে গত ৩১’শে জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হবার পর দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আবারো ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
বিশেষ করে এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে পরিচালিত এরকম শতাধিক বিচাবহির্ভূত হত্যা এবং সেসব বাহাদুরির জন্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বা বিপিএম প্রদানের বিষয়টি এখন সর্বমহলে বিস্ময়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রদীপের নিচে অন্ধকার
প্রকাশিত খবর ও ভুক্তভোগীদের বিবরণ থেকে জানা যায়,সদ্য গ্রেপ্তারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষবাণিজ্য ও লুটপাটের হাতিয়ার ছিল টেকনাফ থানা এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে ক্রসফায়ার। ইয়াবার এ প্রবেশ দ্বার টেকনাফে ক্রসফায়ারের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ককে কার্যত ডেথ জোনে পরিণত করেন তিনি। আতঙ্কে রাতে এ সড়কে চলাচলে মারাত্মক ভীতির সঞ্চার হয় স্থানীয়দের মধ্যে। চাহিদা মতো টাকা না পেয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। এতে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ক্রসফায়ারের পরিসংখ্যান।
কেবল টেকনাফে গত আড়াই বছরে পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ১৬১ জন। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের একটি বড় অংশ সংঘটিত হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে। গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ,বিজিবি ও র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৭ জন। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ১৭৪ জন,বিজিবির সঙ্গে ৬২ জন ও র্যাবের সঙ্গে ৫১ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
ওসি প্রদীপের ভয়ঙ্কর ক্রসফায়ার বাণিজ্য সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়া ও লুটপাটের কিছু তথ্য। এতে দেখা যায় অর্ধ শতাধিক পরিবার থেকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ওসি প্রদীপ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এতেই আঁচ করা যায় গত দুই বছরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে কি পরিমাণ টাকা ও সম্পদ লুটপাট করেছে ওসি প্রদীপ। একজন পুলিশ কর্মকর্তা একাই এতগুলো ক্রসফায়ারে হত্যার সাথে জড়িত এমন খবরে বিস্ময় প্রকাশ করে মানবাধিকার নেত্রী খুশি কবির রেডিও তেহরানকে বলেন,এর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি করেছে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এক বিবৃতিতে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মর্মান্তিক মৃত্যুতে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা টীমের সদস্য থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারকে যদি এভাবে হত্যার শিকার হতে হয় তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? তিনি ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন,করোনা মহামারির এই দুর্যোগেও দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন,আইনের শাসনের প্রতি অনুগত কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে অনুমোদন দিতে পারে না। তিনি বলেন,যত বড় অপরাধী হোক দেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাতেই অপরাধীদের উপযুক্ত বিচার ব্যবস্থ রয়েছে। এই ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে কোনো বাহিনীর সদস্যরা দেশের কোনো নাগরিককে বিচার ছাড়া মেরে ফেলতে পারে না। এই ধারা চলতে দিলে দেশের আইন আদালত আর বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের কোনো আস্থা থাকবে না।
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্স নিউজ