রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি || কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমনরোধে অনলাইনের মাধ্যমে অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রি হলেও সব আসনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে নীলফামারীর চিলাহাটিতে যাওয়া-আসা আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনে। অসাধু কিছু রানিং স্টাফ অর্থের বিনিময়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ফাঁকা রাখা আসনগুলোতে যাত্রী পরিবহন করছে। এতে করে রেলওয়ের আর্থিক ক্ষতি হলেও লাভবান হচ্ছে ওই সকল অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। টিকিটে যাওয়া যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেক যাত্রীর।

গতকাল সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী ৭২৮ নং রুপসা এবং ঢাকাগামী ৭৬৬ নং নীলসাগর আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীপূর্ন প্রতিটি আসন। দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় অনেক যাত্রীকে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, লকডাউন শিথিলের করা হলে সামাজিক দুরুত্ব বজায়ে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে করে মাঝখানে একটি আসন ফাঁকা রেখেই যাত্রীদের বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনামতে বেশ কিছু রুটে যাত্রী পরিবহনে আন্ত:নগর ট্রেন চালু করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় চিলাহটি থেকে ঢাকা এবং খুলনারুটে ওই ট্রেন দুটি নিয়মিত চলাচল করলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থবিধি এবং রেলওয়ের নির্দেশনা।

নীলসাগর ট্রেনের ‘ছ’ বগিতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে পাশাপাশি তিনটি আসনেই যাত্রী বসে থাকায়, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে মাঝের আসনে বসে থাকা যাত্রী মতিয়ার রহমান বলেন, এ্যাটেনডেন্ট (ট্রেন পরিচযর্ক) ২০০ টাকা নিয়ে আমাকে ওই আসনে বসিয়ে দিয়ে যায়। এ্যাটেনডেন্টকে টিকিটের কথা বললে তিনি বলেন, টাকা দিয়েছেন এখন আর টিকিট লাগবে না। একই বগিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকায় যাওয়াটা আমার খুব জরুরী।অনলাইনে টিকিট না পেয়ে কাউন্টারে পাব বলে স্টেশনে এসেছিলাম। কিন্তু টিকিট না পেয়ে যখন ফিরে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই স্টেশনে দায়িত্বপালনকারী এক আরএনবি (রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী) সদস্য এসে বলে, টিকিট লাগবে না আমি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তার হাতে ৩০০ টাকা দিলে তিনি ট্রেনে তুলে দিয়ে আমাকে ঢাকায় নামিয়ে দেয়ার কথা বলেন ট্রেনের ভিতর দায়িত্বপালনকারী আরেক আরএনবি সদস্যকে। ওই সদস্য আমাকে দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে সামনের কোন স্টেশনে আসন খালি হলে বসার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

খুলানাগামী রুপসা ট্রেনে পাশাপাশি তিনটি আসনে বসা যাত্রীদের কাছে প্রশ্ন করলে জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমি এবং আমার চাচা দুইজন খুলনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে অনলাইনে টিকিট নিয়েছি। টিকিটে মাঝের আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। কিন্তু এ্যাটেনডেন্ট একজনকে এনে এখানে বসিয়ে দিয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করে নিজের আসনে বসে থাকতে বলেন। টিকিট নিয়েছেন তো কি হয়েছে বেশি কথা বললে ঘার ধরে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। স্বাস্থ্যবিধির এমন চিত্র সমন্ধে জানতে চাইলে দায়িত্বরত সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আলমগীর হোসেন বলেন, যেহেতু স্টেশনে টিকিট বিক্রি হচ্ছে না সেহেতু এই সমন্ধে আমার কিছু বলার নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচলে প্রয়োজনে ঘন ঘন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। তিনি আরও জানান আসাধু ওই রানিং স্টাফদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রেজা মাহমুদ, নীলফামারী জেলা
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে