সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পাঁচ বছর আজ। তবে, এখনো শেষ হয়নি চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কাজ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের আশ্বাস, দু’পরিবারের কাছে এখন দীর্ঘশ্বাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুরি-বা ডাকাতির নাটকীয়তা বাদ দিয়ে, হত্যা রহস্য বের করার অনুরোধ জানিয়েছে, সাগর-রুনির পরিবার। নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার সাগর-রুনির বাসায় প্রবেশ করা রহস্যময় দুই ব্যক্তিকে পাঁচ বছরেও সনাক্ত করতে পারেনি র্যাব। উদ্ধার হয়নি বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন। এমন অবস্থায় সাংবাদিক দম্পতির স্বজনদের মতো আইন বিশেষজ্ঞরাও শঙ্কিত আলোচিত হত্যা মামলাটির ভবিষ্যত নিয়ে। তাদের ধারণা, রহস্যময় ওই দুই ব্যক্তি আর ল্যাপটপ-মোবাইলেই লুকিয়ে আছে খুনের রহস্য।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পুর্ব রাজাবাজারের বাসায় রহস্যময়ভাবে খুন হন মাছরাঙ্গা টিভির সিনিয়র সাংবাদিক সাগর সরোওয়ার এবং এটিএন বাংলার মেহেরুর রুনি। দম্পতির বেঁচে যাওয়া ৫ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মেঘের বর্ণনা থেক বাসায় একাধিক সন্দেহজনক ব্যক্তির উপস্থিতির ইঙ্গিত পায় তদন্ত সংস্থা। ওই সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন নিহতদের স্বজনকে আশ্বস্ত করে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুনিদের ধরার ঘোষাণা দেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘন্টা শেষ হয়নি ৫ বছরেও। পরিবারের সদস্যসহ সন্দেহভাজন ২১জনের ডিএনএ নমুনা এবং বিভিন্ন আলামত আমেরিকায় পাঠিয়ে পরীক্ষার পর তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব ওই দুই ব্যক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত পরিচয় উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল। এমন তথ্যে চাঞ্চল্য বেড়ে যায় সব মহলে। কিন্তু এরপরও তদন্তের জন্য গত পাঁচ বছরে ৪৭ বার সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে তদন্তকারী সংস্থা। এ অবস্থায় মামলাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমত শঙ্কিত খোদ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
সিএমএম আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ্ আবু বলেন, মামলাটির শেষ কবে হবে এ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। যদি একটি মামলার কার্যক্রম শেষ না হয় তাহলে ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়টি ব্যবহত হবে। জনগণ মনে করবে খুন করেও পার পাওয়া যাচ্ছে। মামলার বাদি রুনির ভাই নওশের রোমানও জানিয়েছেন হতাশা আর ক্ষোভের কথা। তিনি বলেন, গত বছর বহু কিছু ঘটেছে। পরিবারের সদস্যদেরকেও ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা হল, কাউকে খুঁজে বের করা হোক। এভাবে তো চলতে পারে না। সংঘবদ্ধ চোর, ডাকাত, রুনির কথিত ফেসবুক বন্ধুসহ কয়েকজনকে সন্দেহ করলেও কাউকেই অভিযুক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানাতে পারেনি অগ্রগতির কেনো খবর। সম্প্রতি তিনি বলেন, সাগর-রুনির মামলা তদন্তের অগ্রগতি আমার জানা নেই। তবে র্যাবের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করছি যে কোনো সময় ভাল একটি খবর পেয়ে যাবো। হতাশ হলেও ঘটনার পেছনের রহস্য প্রকাশের ব্যাপারে এখনও আশাবাদি সাগর সরওয়ারের মা ছালেহা মনির। তিনি বলেন, আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত বিচার চেয়ে যাবো। আমার বিশ্বাস সত্য বেরিয়ে আসবেই। খুনিরা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেল? আমি মনে করি সরকার চাইলে তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। বাবা-মা হারানো মেঘ এখন সাড়ে নয় বছরে। দুর্বিষহ স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠছে তার রাজ্য। বাবার আদর আর মায়ের স্নেহ খোঁজে তুলির আঁচড়ে। মেঘের দাদি, নিহত সাগর সরওয়ারের মা- স্মৃতির অ্যালবামে খুঁজে ফেরেন একমাত্র ছেলে আর বউমাকে। কখনো সেই দুঃসহ সময় মনে হলে, চোখ ভিজে আসে। সন্তাহারা মা ন্যায়বিচারের জন্য আশা বসে থাকলেও রহস্য উদঘাটনে আর কত সময় লাগবে- এ প্রসঙ্গে একেবারেই চুপ তদন্ত সংস্থা র্যাব। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, শিশু মেঘ কি তার মা-বাবা হারানোর বিচার আদৌ পাবে?
নিউজ ডেস্ক, বিডি টাইম্স নিউজ