ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বেঁধে এনে সালিশ বসানো হয়েছে। সালিশে ওই নারীকে সোয়া লাখ টাকা জরিমানা ও করা হয়। পরে শনিবার  ঔ ঘটনায় মামলা হলে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো- শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রঞ্জন দেবনাথ, সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও যুবলীগ নেতা বোরহান উদ্দিন ছুট্টু, জাহিদুল ইসলাম দুলাল।মামলার অপর আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ধনু মেম্বারের সিএনজি চালক শ্যামগ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীনকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনায় নির্যাতিত নারী দুবাই প্রবাসী কুড়িনাল গ্রামের মোশারফ পারভেজের স্ত্রী হোসনা আক্তার বাদী হয়ে দুপুরে শনিবার নবীনগর থানায় চাঁদাবাজি ও পর্নোগ্রাফী আইনে পাঁচজনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন।

জানা যায়, শ্যামগ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের ইউসুফ মিয়ার মেয়ে হোসনা বেগমের বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের কুড়িনাল গ্রামের দুবাই প্রবাসী মোশাররফ পারভেজের সাথে। এই দম্পতির আরাফাত নামে পাঁচ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামীর সাথে গত কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলছে হোসনার। সেই বিরোধ মেটানোর জন্য তার স্বামীর আত্মীয় কুড়িনাল গ্রামের শামীমকে পরামর্শের জন্য গত ৩ মে শ্যামগ্রামে বাবার বাড়িতে ডেকে আনা হয়।

ইফতার শেষে দুজন আলোচনা করছিলেন। এমন সময় আওয়ামীলীগ নেতার অনুগত ক্যাডার যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে তাদের দুজনকে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তাদের দুজনকে বিবস্ত্র হয়ে জড়িয়ে ধরতে বাধ্য করে সন্ত্রাসীরা। আপত্তিকর অবস্থায় দুজনের ছবিও তুলে তারা। পরে দুজনকে বেঁধে শ্যামগ্রাম বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গভীর রাতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সালিশ করে দুজনকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে । যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা নগদ ও বাকি টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। পরে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে পরিবারের জিম্মায় দুজনকে ছেড়ে দেয় তারা। এই ঘটনা এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন ধনু বলেন, ছেলে-মেয়েটিকে এলাকার ছেলেরা ধরে এনেছিলো। আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে রাত বারোটার দিকে তাদের বিচার করে অভিভাবকের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন টাকা-পয়সার লেনদেন হয়নি।

এব্যাপারে নির্যাতিত ছেলে শামীম মিয়া বলেন,”আমাকে ধনু মেম্বারের লোকজন  মারধোর করে বিবস্ত্র করে ছবি তুলেছে। পরে হাত বেঁধে ধনু মেম্বারের অফিসে নিয়ে আমাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে। ৫০ হাজার টাকা দিয়া ছাড় পাই। আমার উপর অন্যায় করেছে ধনু মেম্বার ও তার লোকজন।”

এবিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী হোসনা বেগম বলেন,”আমার স্বামীর সাথে পারিবারিক ভাবে একটু ঝামেলা চলছে তাই আমার আত্নীয় শামীমকে আসতে বলেছিলাম। দরজা খুলে রুমে কথা বলছিলাম, এসময় ঘরে ডুকে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরে স্থানীয় ধনু মেম্বারের অফিসে বেধেঁ নিয়ে যায়,  সেখানে ধনু মেম্বার আমাদের দুইজনকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। এই ঘটনায় আমি থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ ৪জনকে গ্রেফতার করে।”

এবিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনোজিত রায় বলেন, “শ্যামগ্রামের ঘটনায় পাঁচজনকে আসামী করে চাঁদাবাজি ও পর্নোগ্রাফী আইনে একটি মামলা হয়েছে। চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পলাতক ১ আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”

জহির  সিকদার
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে