ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ করোনা পরিস্থিতিতে বিশেষ ওএমএস সুবিধার আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ৯ হাজার ৬শ’ রেশন কার্ড দিয়েছে সরকার। ওয়ার্ড পর্যায়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে সুবিধা ভোগীদের তালিকা প্রনয়নের কথা থাকলেও অধিকাংশ ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজের ইচ্ছেমতো তালিকা বানিয়ে কার্ড বিতরণ করছেন। সামর্থ্যবানদেরও দিয়েছেন তারা এ সুবিধে। কাউন্সিলরদের দেয়া তালিকা কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই জমা দেয়া হয় রেশনের জন্যে। শুধু তাই নয়, গরীবের এই রেশন কার্ড বিতরণে ভিআইপি কোটাও সংরক্ষণ করা হয়েছে এই পৌরসভায়। এছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়। এই টাকাও কাদের মধ্যে বিতরন হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে রেশন কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে মেয়রের কাছেও ছুটে গেছেন লোকজন।

জেলা খাদ্য অফিস সূত্র জানিয়েছে- প্রথম দফায় তারা এই পৌরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্যে ৫’শ করে রেশন কার্ড বরাদ্দ দেন। সেই হিসেবে ১২টি ওয়ার্ডে ৬ হাজার কার্ড দেয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আরো ৩৬’শ কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথম দফায় তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর ইতিমধ্যে রেশন বিতরণের কাজও শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ওয়ার্ড পিছু যে ৩’শ কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এর তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে এখন। রেশন কার্ডধারী একজন মাসে ২০ কেজি করে চাল পাবেন প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে। ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা চালক, ভ্যান চালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া সম্প্রদায়সহ কর্মহীন সকল মানুষ এই বিশেষ ওএমএস সুবিধে ভোগী হবেন বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়।

পৌরসভার সচিব মো. শামসুদ্দিন জানান- ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন করার জন্য তারা নির্দেশনা দিয়েছেন। এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর সভাপতি, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। তাছাড়া সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক প্রতিনিধি, রেডক্রিসেন্ট, এনজিও, ইমাম, পুরোহিত ও গণমাধ্যম প্রতিনিধি কমিটিতে সদস্য থাকবেন। কিন্তু অভিযোগ মিলেছে কাউন্সিলররা তাদের অনুগত লোকজনকে নিয়ে নামমাত্রই এই কমিটি করেছেন। কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে সবকিছু চূড়ান্ত করার পর স্বাক্ষর আদায় করে নিচ্ছেন তারা। পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য জানান- তার কাছে স্বাক্ষর নিতে আসার পরই জানতে পারেন তিনি কমিটিতে আছেন। এরআগে কাউন্সিলর কি করেছেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। আরেকজন সদস্য জানান- তার কাছ থেকে একজন এসে খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। এই ওয়ার্ডের তালিকা নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খোকন বলেন- দক্ষিণ মোড়াইল সবচেয়ে বড় গ্রাম।

সেই হিসেবে এখানকার লোকজন কার্ড পায়নি। ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মাহমুদা রহমান জানান, তিনি নিজেই জানেন না রেশন কার্ড কারা পাচ্ছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাকে ৫২টি রেশন কার্ড দিয়েছেন। বাকী ১০ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে কোন কার্ডই পাননি। ১০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার কাউতলী গ্রামে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা তার নিজের বলয়ের অর্ধশতাধিক লোকের নাম রেশন কার্ডের তালিকায় উঠিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কাউন্সিলর মাকবুল হোসেন জানান- কাউতলী গ্রামে ৩টি গোষ্ঠী আছে। এই গোষ্ঠীর নেতাদের সহায়তায় তালিকা করা হয়েছে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় অন্য এলাকা ফুলবাড়িয়া, নাটাই, বিরাশার গ্রামের লোকজনের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ওয়ার্ডের তালিকা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে মেয়র যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান লিটনসহ কয়েকজনকে বিতরণের জন্যে ৫০/৬০টি কার্ড দেন। কাউন্সিলর মিজানুর রহমান আনসারী বলেন, অন্য ওয়ার্ডের ৫টি কার্ডও পাওয়া যাবে না এখানে। তবে ৫/৭ বছর আগে আমার ওয়ার্ডে ছিলো এমন ২০/২২ জনের নাম থাকতে পারে তালিকায়। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চন্ডালখিল গ্রামে এক গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে রেশন কার্ড। গোকর্ণ গ্রাম ছাড়া এই ওয়ার্ডের অন্যান্য গ্রামের সবারই আছে এনিয়ে অভিযোগ। পৌরসভায় খোজ নিয়ে জানা গেছে- রেশন কার্ডের বিষয়টি দেখাশুনা করছে মেয়রের পিএস রানা কুমার দাস। রানা জানান- কাউন্সিলররা লিস্ট জমা করার পর আমরা মেয়র স্যারের স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিয়ে দিচ্ছি।

দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ করা ৩শ’ রেশন কার্ডের মধ্যে কাউন্সিলররা দিচ্ছেন ২’শ জনের নাম। মেয়র ৫০ জন আর ভিআইপিদের লোকলস্করদের দেয়ার জন্যে ৫০টি করে কার্ড সংরক্ষণ করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা দলের নেতাসহ বিশেষ লোকজনের চাহিদায় এই কার্ড বিলিবণ্টন করবেন বলে পৌরসভার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া মেয়রের আশপাশে থাকা লোকজনও ব্যস্ত নিজেদের লোকজনের মধ্যে রেশন কার্ড, ভাতা ও খাদ্য সহায়তা বিতরণে। পৌরসভার মেয়র নায়ার কবিরের দাবি  কাউন্সিলররা কমিটির মাধ্যমেই তালিকা প্রণয়ন করছেন। তাদের সিগনেচার নিয়েই তালিকা জমা দিচ্ছেন।

তিনি জানান- প্রথম দফায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে যে ৫’শ কার্ড দেয়া হয়েছে সেখান থেকে তিনি কোন কার্ড রাখেননি। দ্বিতীয় দফায় আসা কার্ড থেকে প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে ২’শ করে কার্ড দেয়া হয়েছে। আর সব ওয়ার্ড থেকে ৫০টি করে কার্ড বরাদ্দ রাখা হয়েছে মেয়রের জন্য। বাকি ৫০টি রাখা হয়েছে রাজনৈতিক নেতা ও বিশেষ লোকজনের সুপারিশে দেয়ার জন্যে। তিনি বলেন, আমার ভাগে রাখা কার্ড থেকে ১২টি ওয়ার্ডে যারা পাইনি তাদেরকে দিয়ে আমি কাভার করার চেষ্টা করছি।ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় এ পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৮২ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। শিশু খাদ্য সহায়তার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২ লাখ টাকা।

জহির সিকদার
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে