ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতাঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলাচলকারী বাস-মিনিবাসগুলোতে চালক, কন্ডাক্টর ও সহযোগী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করত। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন । চলছে লকডাউন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।গাড়ি চালাতে না পাড়ার কারনে তারা এখন বিপাকে পড়ে গিয়ে সংসার চলবে কি করে , তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছে তারা।কি করবে তারা ? সংসার চলবে কি করে। এ নিয়ে যেন মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের।প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও দ্বিতীয় দফায় বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। এরপর ৩য় দফায় বন্ধ ঘোষণা করা হয় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় তিন হাজার পরিবহন শ্রমিক।সরকারিভাবে এবং মালিক সমিতির কাছ থেকে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যসামগ্রী পেলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

সম্প্রতি পরিবহন শ্রমিক  সুত্রে জানা যায়, জেলা শহরের মেড্ডা বাসস্ট্যান্ড, ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল ও পৈরতলা বাসস্ট্যান্ডে  চলছে সুনসান নীরবতা। বাস কাউন্টারগুলোও তালাবদ্ধ হয়ে আছে। অথচ পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীদের পদচারণায় সারাক্ষণ মুখর থাকতো এ বাসস্ট্যান্ডগুলো।কিন্তু থমকে যাওয়া এ পরিস্থিতিতে উপার্জন না থাকায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। তাই তারা তাদের পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে এ মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা।পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন পরিবার নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মেড্ডা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। দুই যুগ ধরে তিনি মটরযান চালনায় যুক্ত । বর্তমানে একটি বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতেন। বাস চললে দৈনিক ৫শ থেকে ৬শ টাকা উপার্জন করতেন তিনি।এ টাকায় পাঁচ সদস্যের সংসার চললেও এখন আর সেটি হচ্ছে না। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় সংসার চালানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আলাউদ্দিন। সরকারি ও মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কিছু চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া হলেও বাসা ভাড়া ও সাংসারিক খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

বাস কন্ডাক্টর আলাউদ্দিন বলেন, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মালিক সমিতি থেকে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছিল তা শেষের পথে। সামনের দিনগুলোতে কিভাবে চলবে এ নিয়ে তার ভাবনার যেন শেষ নেই ।জসিম মিয়া নামে এক বাসচালক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উপার্জনের পথ বন্ধ। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে চলার কোনো উপায় নেই। সব শ্রমিকের একই অবস্থা। সরকার ও মালিক সমিতি যদি তাদের এ বিপদে পাশে না দাঁড়ায় আমাদের পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।ছুট্ট মিয়া নামে একজন বাস মালিক জানান, একটা বাসের সঙ্গে তিন-চারটা পরিবার জড়িত। করোনার এ দুর্যোগে সবার অবস্থা এখন খারাপ। গাড়ি না চলায় মালিকদের উপার্জনও বন্ধ। তবুও  যতটুকু সম্ভব শ্রমিকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সবাইকে পথে বসতে হবে।

এ ব্যাপারে জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ বলেন, পরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। তারা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে  শ্রমিকদের হাতখরচের জন্য কিছু টাকা দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ সহায়তাও দেয়া হয়েছে।কিছু ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে  যোগাযোগ ও করা হয়েছে  বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শামছুজ্জামান জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য মালিক-সমিতির কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।অন্যদিকে করোনায় আশুগঞ্জে বেকার কয়েক হাজার নির্মাণ শ্রমিক।করোনা ভাইরাসের লকডাউনে সড়ক কিংবা ভবন নির্মাণসহ সব উন্নয়ন প্রকল্পই বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব উন্নয়নকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বেকার বসে রয়েছেন। এদের অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করলেও কারও কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে পারছেন না। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন শ্রমজীবী এসব মানুষরা।আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর, আড়াইসিধা, তালশহর, আলমনগর,চরচারতলা, লালপুর, সোহাগপুর, বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের বর্তমান জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়।টাইলস শ্রমিক হিসেবে দিনে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা মজুরিতে কাজ করেন যাত্রাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম (২৫)। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে তার সংসার। ১০ দিন ধরে কাজ না থাকায় ধার-কর্জ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

একই গ্রামের টাইলস শ্রমিক সাহালম মিয়া, বেলাল ও বাবুরও কাজ নেই। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। একই গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক এনামুল, আব্দুর রহিম, আলহাজ আলী ও জিহাদেরও কাজ নেই ১২ দিন ধরে। মাঝে মধ্যে কাজের সন্ধানে বের হলেও সাইট বন্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে।
আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক বাবু আলী। স্ত্রী, চার সন্তান ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তার সংসার। দৈনিক সাড়ে ৩শ টাকা মজুরিতে কাজ করতো তাই দিয়েই চলতো তার সংসার। দেড় সপ্তাহ ধরে কাজ না থাকায় সংসার চালাতে দাদন ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল্লাহ ও শফিকুলও সংসার চালাতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

এসব নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, আমরা প্রতিদিনের কাজের মজুরি দিয়ে সংসার চালাই। অথচ করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোনোমতে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এরপর থেকে সংসার চালাতে পারছি না। এভাবে আর কিছুদিন চললে পথে বসতে হবে আমাদের।

শ্রমিকরা আরও বলেন, শুনেছি সরকার ঘরে ঘরে চাল-ডাল পৌঁছে দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই কোনো সাহায্য পাইনি। কারও কাছে হাত পেতে চাইতেও লজ্জা লাগে। বাধ্য হয়ে চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রির প্রধান ও সাব ঠিকাদার গোলাপ কনট্রাক্টর বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকরাই বেকার ঘরে বসে রয়েছে। এভাবে কয়দিন চলবে তাও বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের প্রতি বেকার দরিদ্র শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানান তিনি।তাছাড়া আশুগঞ্জের বিত্তশালী অনেকেই এসব বেকার, অসহায়, ও গরীবদেরকে ত্রাণ দিয়ে সহযোগিতা করছে।কর্মহীন এ সব নির্মাণ শ্রমিকদের প্রতি  সহানুভূতির হাত বাড়ানোর জন্য ভুক্তভোগী মহল দাবী করছেন।

জাহির সিকদার
নিউজ ডেস্ক ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে