বাংলাদেশে একটি হত্যা মামলায় ২০ বছরের মতো কারাভোগ করার পর আদালতে পুরোপুরি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন শতবর্ষী এক নারী। পরিবারের বেশ ক`জনের সাথে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন চাঁদপুরের অহিদুন্নেসা।

আজই তিনি ছাড়া পেয়েছেন কাশিমপুর জেল থেকে। ছেলেসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য তাকে গ্রহণ করেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ছাড়া পাওয়ার সময় যারা তার মুক্তির জন্য ভূমিকা রেখেছেন অহিদুন্নেসা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, “কারাগারেই ভেতরেই মারা যেতে হয় কিনা এরকম একটা বিষয় তার মাথায় সবসময় কাজ করতো।” “যেহেতু তার অনেক বয়স হয়েছিলো, তার চলাফেরায় অসুবিধা হতো। তার একজন দেবরের ছেলের বউ একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তার সাথেই জেল খাটছিলেন। তিনিই অহিদুন্নেসাকে দেখাশোনা করতেন।” অহিদুন্নেসা যখন কারাগারে যান তখনই তার বয়স আশির কোঠায়। তার ছাড়া পাওয়ার গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানায়। মি. বালা জানান, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা জুন মাসের শেষের দিকে গিয়েছিলেন কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনে। সেখানে অহিদুন্নেসা তার নজরে আসে।

তবে গল্পের শুরু সেই ১৯৯৭ সালের যখন জমিজমা নিয়ে কোন্দলকে ঘিরে চাঁদপুরের মতলবে ঘটেছিলে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। একই পরিবারের সাতজনকে হত্যা করা হয়েছিলো, হত্যাকাণ্ডের দায়ে একই বাড়ির শরিক অহিদুন্নেসার স্বামীসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিলো। আরো কয়েকজন আত্মীয়র সাথে অহিদুন্নেসার যাবজ্জীবন। কিন্তু সেই কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্যে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে আবেদন করতে না পারায় তার যাবজ্জীবন বহাল থাকে। সেই আপিলেরই সুযোগ তিনি পেলেন প্রধান বিচারপতির কারাগার পরিদর্শনের পর।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, একটি শুনানির পর তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দিয়েছে আদালত। তিনি বলেন, “হাইকোর্ট ডিভিশন, আপিল বিভাগ, সেশনস কোর্টের তিনটা রায়ই পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, যে স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ওনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিলো, আসলে সেই স্বীকারোক্তিতে তিনি ঐ হত্যায় নিজেকে জড়িত করেন, আদালত মনে করেছে যে পরিবারের অন্যান্য অনেকেই হয়ত ঐ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু তিনি এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেননি। কাজেই ওনাকে সাজা দেয়াটা সঠিক বলে সর্বোচ্চ আদালত মনে করেন নি। তাই তাকে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।” কিন্তু মুক্তি পাওয়ার আগেই দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোটাই হারিয়ে ফেলেছেন অহিদুন্নেসা। জেলে থাকা অবস্থাতেই স্বামী ও এক সন্তানকে হারিয়েছেন। তবে মৃত্যুর আগে অন্তত মুক্তির স্বাদ পেলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে