লক্ষ্মীপুরে দন্ত চিকিৎসার নামে জেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধ শতাধিক ক্লিনিকে চলছে অপচিকিৎসা। ডিগ্রী না থাকলেও অনেকই নিজেকে ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, কনসালটেন্ট পরিচয় দিয়ে কিংবা ভূয়া সনদ নিয়ে ক্লিনিক খুলে এখন রমরমা ব্যবসা করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন এসব হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে রয়েছেন অনেকেই। এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াসহ জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের গাজী শপিং কমপ্লেক্স ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায় ল্যাব এইড ডেন্টাল ক্লিনিক নামের একটি সাইন বোর্ড ঝুলে আছে। সাইন বোর্ডে লেখা আছে (ডেন্টাল সার্জন) ডাক্তার মো. ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, এক্স কনসালটেন্ট সাভার জেনারেল হাসপাতাল, আরো রয়েছে নানা পদবী। অর্থাৎ ওই ক্লিনিকে এই নাম ও পদবীর চিকিৎসক রোগী দেখেন বুঝানো হয় মানুষকে। মার্কেটের নিচ তলায় ৩ বছর আগে ক্লিনিকটি গড়ে উঠে। এখানে রোগী দেখেন তিনি। ক্লিনিকটির ভিতরে গিয়ে দেখা গেছে এক রোগীর দাঁতের চিকিৎসা করছেন এই চিকিৎসক। বাহিরে অপেক্ষমান রয়েছে আরো দুইজন রোগী, তারা জানেননা মুরাদ প্রকৃত ডাক্তার নাকি ভূয়া। আধাঘন্টা পর অবসর হন মুরাদ। এসময় তিনি কি চিকিৎসা সেবা দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থায়ী ও অস্থায়ী ফিলিং, লাইট কিউর মেশিনে ফিলিং, পলিসিং, আকাঁ বাঁকা দাঁত সোজা করা, দাঁত উঠানো, দাঁত বাধানো, রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট, চিস্ট অপারেশনসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করেন। এসোসিয়েশনের মুল্য তালিকা অনুযায়ী বিল নেন জানিয়ে অসাধূ ডাক্তাররা অনেক ক্ষেত্রে বেশী বিল নেন বলে জানান। অথচ লক্ষ্মীপুরে ডেন্টাল এসোসিয়েশন বলতে কিছু নেই। এক্ষতে ্র তনি নিজেই রোগীর প্রকার ভেদে ২ হাজার থেকে- ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠে।
সাইন বোর্ডে লেখা অনুযায়ী ডেন্টাল সার্জন ও কনসালটেন্ট সম্পর্কে জানতে চাইলে মুরাদ বলেন, ডেন্টাল সার্জন হচ্ছে দাঁতের ছোট ছোট যে কাজ গুলো করা হয় তাই সার্জারী, আর যে এ কাজ করেন সেই সার্জন। কনসালটেন্ট ব্যবহার করা সমর্কে তিনি বলেন, ঢাকার একটি হাসপাতালে দুই জন ডাক্তার রোগী দেখতেন, পরে তারা চলে যাওয়ার পর ১ বছর মেয়াদী একটা কোর্স শুরু করেন মুরাদ। পরে সেখানে থাকার সুবাধে হাসপাতালের লোকজন তাকে কনসালটেন্ট উপাধী দেয়।
মুরাদের এমন ব্যাখ্যায় আর বুঝার বাকি থাকেনা তিনি প্রকৃত ডাক্তার নাকি ভূয়া ডাক্তার। শুধু ল্যাব এইড ডেন্টাল ক্লিনিকের ওয়াহিদুর রহমান মুরাদই নন, তার ক্লিনিকের ২০০ গজের মধ্যে রায়পুর চাঁদপুর সড়কের পূর্বপাশে ফাতেমা ডেন্টিস্ট পয়েন্ট নামের আরো একটি ক্লিনিক রয়েছে। এখানে বাহিরে ডাক্তার আহমেদ শাহরিয়ার হাসান সোহেল নামের একজনের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে আল আমিন নামে এক ব্যাক্তি ভেতরে রোগী দেখেন। সম্প্রতী এ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসে অপ চিকিৎসাসহ প্রতারণার শিকার হয়েছেন ফরিদগঞ্জের আনছুরা বেগম ও নজির আহমদ। তাদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র বাবদ ৮০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ করে রোগ মুক্তি না হওয়ায় অন্যত্র চিকিৎসা নেন বলে জানান তারা। একইভাবে অন্যান্য রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা। অভিযোগ বিষয়ে জানতে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় দরজায় তালা ঝুলছে, সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায় বলে পাশবর্তীরা জানান। এভাবে জেলার রায়পুরে আরো ১৫/২০টি, সদর, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর ও চন্দ্রগঞ্জে দন্ত চিকিৎসার নামে অর্ধশতাধিক ভূয়া ডাক্তারের চেম্বার রয়েছে বলে জানান ডেন্টাল সার্জন ডা. মো: আবু ইউছুপ ভূঁইয়া বি.ডি এস ( ডি ইউ)। প্রতিনিয়ত এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন ডাক্তার মো: ইউছুফ জানান, হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে মরণঘাতি হ্যাপাটাইটিস, সিপিলিস, গণোরিয়া, এইডস ও ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্্রান্ত হয়ে অনেকেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে রয়েছেন। এসব হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াসহ জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার গোলাম ফারুক ভূঁইয়া জানান, যদি কেউ নামের আগে ডাক্তার লেখার ইচ্ছা পোষন করেন অথবা রোগী দেখার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে এম বি বি এস অথবা বি ডি এস ডিগ্রী অর্জন করতে হবে, এরপর বি এম ডি সিতে আবেদন করলে রেজিষ্ট্রেশন দেয়ার পর রোগী দেখতে পারবেন। এছাড়া রোগী দেখা আইনগত নিষিদ্ধ। কয়েকটি দন্ত চিকিৎসালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, অন্য ভূয়া প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিশেষ প্রতিনিধি,বিডি টাইম্স নিউজ