(কুনমিং থেকে ফিরে) এ যেন চায়নার চির বসন্তের নগরী কুনমিং এর ইউনান এ এক টুকরো বাংলাদেশের মিলনমেলা। চীন এবং বাংলাদেশের শিক্ষা এবং সাংস্কৃতি সমঝোতা স্মারকের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ- চায়না ইয়ুথ ক্যাম্প ২০১৯। ২৫ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা এই ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে একঝাক বাছাই করা মেধাবী তরুন শিক্ষার্থীগন ।

চীনের বুকে নিজের দেশের শিল্প-সাংস্কৃতিকে তুলে ধরতে যারা নিংড়ে দিয়েছেন নিজেদের সর্বোচ্চ মেধা-মনন। দেখিয়েছেন বাঙ্গালির আতিথেয়তা আর আপন করে নেয়ার নানা কলা কৌশল।নিজেদেরকে চায়না সাংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তাঁদেরকে আপন করে নেয়ার মাধ্যমে চায়নার বুকে চিনিয়ে দিয়ে এসেছেন এই ছোট্ট বাংলাদেশের মানুষদেরকে। দিয়েছেন আবেগের বাঙালি অনূভুতি, হাসিয়েছেন হেসেছেন, কাদিয়েছেন কেদেছেন নিজেরাও।

এইবারের এই ইয়ুথ ক্যাম্পে অংশ  নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগন।এই ইয়ুথ ক্যাম্পের স্পন্সর করছে বাংলাদেশে অবস্থিত চাইনিজ দূতাবাস এবং চীনের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট। ১২ দিনব্যাপী চলা এই ইয়ুথ ক্যাম্পের আয়োজক হিসেবে কাজ করছে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়। সহ-আয়োজক  হিসেবে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট এবং সিআরআই – সিএমএফ এর কনফুসিয়াস ক্লাস্রুম। ১৫০ জনের বিশাল এই প্রতিনিধি দলটি ১২ দিনে নানা প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।শিক্ষা এবং সংস্কৃতি বিনিময় এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ থেকে আগত তরুণ শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেলেন ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসে। শিখেছেন চাইনিজ ভাষা ও তাঁদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কে।

৪ সেপ্টেম্বর সার্টিফিকেট প্রদান ও জাকজমকপুর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশ- চায়না ইয়ুথ ক্যাম্প ২০১৯ এর সমাপ্তি অনুষ্ঠান। এইদিন বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিরা দেশীয়  সংস্কৃতি উপস্থাপনের মাধ্যমে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে ধরেন এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে।

সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে অবস্থিত চাইনিজ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি মহোদয়।আরো উপস্থিত ছিলেন কনফুসিয়াস হেডকোয়াটাররের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এবং ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাইনিজ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইয়্যুচিয়া পিং মহোদয়।

এই ইয়ুথ ক্যাম্পের মধ্যমে বাংলাদেশ এবং চায়নার মধ্যকার সম্পর্ক আরো গভীর এবং সুদৃঢ় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ থেকে আগত চারটি দলের একেক জন প্রতিনিধিগন। তারা তাঁদের দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরেন এই ইয়ুথ ক্যাম্প চলাকালীন নানা অভিজ্ঞতার কথা।এরপর সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন ক্যাম্পের প্রতিটি দলের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ। তারপর প্রতিটি দলের একজন প্রতিনিধি বৃন্দ তাঁদের গ্রুপের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।

সার্টিফিকেট গ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় মনোরম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মধ্য দিয়ে সুচনা হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার।বাংলাদেশ থেকে আগত এম্ব্যাসি টিমের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় প্রানবন্ত দেশীয় নৃত্য। পুরো হল রুম আস্তে আস্তে মেতে উঠতে শুরু করে।

মনে হচ্ছিল যেন রঙের ভেলা ছড়িয়ে মেঘের দেশে একঝাক বাঙালি তরুণ-তরুণী হেসেখেলে চিনিয়ে দিচ্ছে তাঁদের প্রিয় মাত্রভূমি বাংলাদেশকে। এম্ব্যাসি টিমের পর মঞ্চে আসে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ।

নাচ আর নাটিকা দিয়ে তারা মোহে আছন্ন করে রাখে বেশ কিছুক্ষন। মনে হচ্ছিল মোহের আবেশে চীন- বাংলাদেশ যেন একই সূতায় গাথা। মোহ কাটতে না কাটতেই মঞ্চে কবিতা নিয়ে হাজির হন এম্ব্যাসি টিম থেকে আগত যমুনা টিভি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আহমেদ রেজা। নিজেদের মেধা আর মনন নিংড়ে যেন সবাই চিনিয়ে দিচ্ছিলেন ছোট্ট বাংলাদেশটাকে।

এ যেন বিদেশের মাটিতে দেশকে চেনানোর এক অপার প্রতিযোগিতা।এরপর সিআরআই- সিএমএফ গ্রুপ থেকে পরিবেশিত হয় লালন সঙ্গীত, দেশাত্তবোধক গান। পরপরই মঞ্চে আসেন ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা তাদের নিজেদের দেশীয় দলগত গান পরিবেশনা করেন।

সবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা ভেংগে মঞ্চ মাতাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে” গান টি দলগত পরিবেশনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা মোড় নেয় উত্তাল উন্মমাদনায়। গানের শেষ হতে না হতেই ভরাট কন্ঠের ঝঙ্কারে কবিতার মোহে আচ্ছন্ন করে তোলেন রেডিও একাত্তরের খোরশেদ আলম।

এরপর আসে যৌথ পরিবেশনায় লালন সঙ্গীত। একের পর এক চলতে থাকে মনোমুগ্ধকর সব দেশীয় ঘরানার জমকালো পরিবেশনা। ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রুম ততক্ষনে এক টুকরো বাংলাদেশে পরিনত হয়েছিল যেন। নাচে গানে মেতে উঠেছিল বিদেশী বন্ধুরাও।

১২ দিনের সফরের শেষ দিনের এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা যেন বাংলাদেশী এবং চাইনিজ শিক্ষারথী বন্ধুদের এক্সুত্রে গেথে দিয়েছিল। সম্প্রিতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল যেন বাংলাদেশ-চায়না।

শামস ই তানভীর
মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর, বিডি টাইমস নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে