দেশে প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ১৬ কোটির এই দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা দেড় থেকে ২ কোটি। বন্ধুদের প্ররোচনা, কৌতূহল আর সহজলভ্য হওয়ায় তরুণরা সহজেই মাদকাসক্ত হচ্ছে।
আর, নেশার অর্থ যোগাতে বড় বড় অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে কেউ কেউ। তবে, প্রভাবশালীমহলের সহযোগিতায় গড়া সিন্ডিকেট না ভাঙ্গতে পারার কারণেই মাদকের ভয়াবহতা কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করছে- বিশেষজ্ঞরা। ধূমপানে কৌতূহলী হয়ে বন্ধুর হাত ধরে মাদকে আসক্ত হচ্ছে তরুণরা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ কেউ বাদ যাচ্ছে না এই মরণাসক্ত থেকে। সমাজের নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের তরুণরা নেশার বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে।
সহজে পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ইয়াবা আর গাজা। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়া, নৈতিক-মূল্যবোধ কমে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত অর্জনের কারণেই দিন দিন আসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণ সমাজ বন্ধুদের উপর খুব বেশি গুরুত্ব দেয়। আর বন্ধুদের মাধ্যমে তারা ক্রমাগত মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। আর যখন সে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা না পায় তখনই ছিনতায়, চুরির দিকে পা বাড়ায়।’ দেশে ৩২ ধরণের নেশার উপাদান পাওয়া গেলেও এর বেশিরভাগই আসে ভারত ও মিয়ানমার থেকে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাদকাসক্তের কারণে প্রায় ২৫ ধরণের রোগ হয়। আসক্তরা দ্রুত কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের মানস সদস্য সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি।’ অবস্থানগত কারণে পঞ্চাশের দশক থেকে মাদক পাচারের করিডোর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বাংলাদেশ। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল, গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ও গোল্ডেন ওয়েজের সংযোগস্থল হওয়ায় দেশে মাদকের ভয়ানক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সাথে আছে প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা। তাই, মাদকের ভয়াবহতা দূর করতে সিন্ডিকেট ভাঙ্গার পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগের কথা জানান- সংশ্লিষ্টরা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, আমরা যাদেরকে আটক করি তারা অনেক ক্ষেত্রে তাদের সঠিক পরিচয়টি গোপন করে এবং বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করে।’ দেশে মাদকদ্রব্য কমানো গেলে বাজেটে সাশ্রয় হবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতির চেহারা। সচেতনতার পাশাপাশি, সুস্থ বিনোদন এবং আইনের প্রয়োগ চান সংশ্লিষ্টরা।