নওগাঁর মহাদেবপুর ও সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্রভূমিতে আবারো নতুন একটি খনিজ সম্পদ এলাকার সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ ভূ-তাত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। জিএসবির সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম খান সম্প্রতি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে সদ্য আবিষ্কৃত দেশের সর্ববৃহত চুনাপাথরের খনি তাজপুর পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, নতুন খনিজ এলাকায় কি ধরনের সম্পদ আছে তা নিশ্চিত হতে চলতি অর্থ বছরের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে সদ্য আবিষ্কৃত দেশের সর্ববৃহত চুনা পাথরের খনিতে আরো কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান চালানোর কথা জানান তিনি।
জিএসবির সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম খান আরো বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে নওগাঁ জেলার মাহদেবপুর ও সাপাহার উপজেলায় প্রাথমিক জরিপ চালানো হয়। এতে মাটির আড়াই থেকে তিন হাজার ফুট গভীরে খনিজ সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সেটি নিশ্চিত হতে এ বছর গবেষনামূলক আরো দুটি জরিপ চালানো হবে ওই এলাকায়।
এদিকে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে স্তর তাত্বিক তথ্য সংগ্রহকালে আবিষ্কৃত দেশের সবচেয়ে বড় চুনাপাথরের খনির প্রথম কূপের কাজ শেষ করা হয়েছে। তবে এ খনিতে চুনাপাথর ছাড়াও কয়লা বা অন্য কোন সম্পদ আছে কি না তার অনুসন্ধানে আরো ৩ থেকে ৪ বছর গভীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালানোর কথা জানান তিনি। একই সাথে নতুন খনিজ এলাকায় গবেষনা চালানোর জন্য জোরে সোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ও তারা।
জিএসবির উপ-পরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশল) ও তাজপুর স্তর তাত্বিক তথ্য সংগ্রহ প্রকল্পের টিম লিডার মাহিরুল ইসলাম বলেন, প্রথম কূপের খনন কাজ শেষে সপ্তাহ ধরে তাজপুরের কূপ থেকে কেসিং ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ উদ্ধারের কাজ চালানো হচ্ছে। তবে খনির বিস্তৃতি ও মজুদের সঠিক পরিসংখ্যান পেতে খনি এলাকায় আরো কমপক্ষে ৩টি কূপ খনন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, চলতি অর্থ বছরের আগষ্ট মাসের দিকে প্রথম কূপ থেকে এক কিলোমিটার দূরুত্বে ৪ হাজার ফুট গভীর করে আবারো একটি নতুন কূপ খনন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। স্থান নির্ধারন হলেই যন্ত্রাংশগুলো সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
জিএসবির গবেষকরা বলছেন, তাজপুরের খনিতে প্রথম কূপটি গভীর করা হয়েছে ২ হাজার ৭শ’ ফুট। এর মধ্যে চুনা পাথরের পুরুত্ব রয়েছে প্রায় ১শ’ ফুট। যা দেশের সবচেয়ে বড় মজুদ। এছাড়া তথ্য সংগ্রহকালে যেসব নমুনা পাওয়া গেছে তাতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ফুট গভীরতায় কয়লা ও কয়লার মধ্যে মিথেন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে নওগাঁয় আবারো নতুন খনির সন্ধান পাওয়ায় উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল। জেলার চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মোহাম্মদ আলী দ্বীন বলেন, দিনের পর দিন নওগাঁয় খনিজ সম্পদ পাওয়ায় নওগাঁর জনগন খুশি। শুনেছি নওগাঁর মহাদেবপুর-সাপাহারে আবারো খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়ার কথা। এদিকে কৃষিভিত্তিক কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্প গড়ে উঠলেও নওগাঁয় পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়নি ভারি শিল্পায়নের। কিন্তু প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির একের পর এক খবরে আশার আলো দেখছেন এ অঞ্চলের শিল্প উদ্যোক্তারা।
এদিকে নওগাঁ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বন্দর রক্ষা কমিটির আহবায়ক এ্যাড. মহসিন রেজা বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ এলাকার কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করানো গেলে উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁ হতে পারে খনিজ সম্পদ আহরনের একটি বড় ক্ষেত্র।
উল্লেখ, গত প্রায় দুই বছর ধরে বগুড়ার সান্তাহার, নওগাঁর তিলকপুর, তাজপুর ও জয়পুরহাটের আক্কেলপুর এলাকায় জিএসবির এক ভু-তাত্ত্বিক জরিপে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় চুনাপাথর খনির সন্ধান পাওয়া যায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার তাজপুরে। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী সরকারের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের ভু-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর এ খনির খনন কার্যক্রম প্রথমে শুরু করেন। ২ হাজার ২শ ১৪ ফুট গভীরে প্রথমে মেলে চুনাপাথর।
প্রায় ৫০ বছর আগে এ এলাকায় প্রাথমিকভাবে খনিজ সম্পাদের উপর জরিপ চালানো হয়েছিল। তখন চুনাপাথর অথবা কয়লা পাওয়া যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এনিয়ে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা আর চালনো হয়নি। বর্তমান সরকারের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু হলে এর ফলশ্রুতিতে সন্ধান পাওয়া যায় তাজপুরে চুনাপাথরের।
খন্দকার রউফ পাভেল
নওগাঁ প্রতিনিধি, বিডি টাইম্স নিউজ ।