প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলো বিদেশি পরামর্শকদের কথা মতো কাজ করে, তারা রেলকে ভঙ্গুর খাতে পরিণত করেছিলো। শনিবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন ট্রেন- ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময়, দেশের দুর্গম এলাকাসহ প্রত্যেকটি জেলায় রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুলেট ট্রেন ও পাতাল রেল চালুরও প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে একই অনুষ্ঠান থেকেই খিলগাঁও ফ্লাইওভার এবং হাতিরঝিল এলাকায় সাউথ লুপেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা- চট্টগ্রাম রুটে বিরতিহীন ট্রেন হিসেবে চালু হলো ‘ সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’। শনিবার সকালে বিশেষ এই ট্রেনটির উদ্বোধন উপলক্ষে কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আমদানি করা বগিতে নিজে উঠে চালু করেন ট্রেনটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম। পাশাপাশি রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসে সংযোজন করেন নতুন বগি।
উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী অতীতের সরকারগুলোর সমালোচনা করে বলেন, বিদেশি পরামর্শকদের বুদ্ধিমতো দিনের পর দিন রেল খাতকে মুমূর্ষু বানানো হয়েছিলো। সরকার রেলের বন্ধ শাখা লাইন চালু, ডাবল লাইন নির্মাণ ও নতুন রেললাইন নির্মাণের পাশাপাশি রেলওয়ের জনবল ও রোলিং স্টক সঙ্কট দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ পর্যন্ত ৯৮টি নতুন ট্রেন চালু এবং ২৬টি ট্রেনের সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকারের সময়ে নতুন ২০টি মিটার গেজ এবং ২৬টি ব্রড গেজ লোকোমোটিভ, ১২০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী গাড়ি, ১৬৫টি ব্রড গেজ ও ৮১টি মিটার গেজ ট্যাংক ওয়াগন, ২৭০টি মিটার গেজ ফ্লাট ওয়াগন এবং ২০ সেট মিটার গেজ ডেমু সংগ্রহ করা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের মতো দেশেও বুলেট ও পাতাল ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন- দুর্গম এলাকাতেও রেলগাড়ি পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাপানের বুলেট ট্রেনের প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিল। যতবার জাপানে গিয়েছি, সেখানে বুলেট ট্রেনে উঠতাম। সেদিন বেশি দূরে নয়, আমরা দেশেই এই বুলেট ট্রেন চালু করতে সক্ষম হব।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নতুন ট্রেন সার্ভিস ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক জাপান সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “আমাদের দেশে কবে হাই স্পিড বুলেট ট্রেন করতে পারব?” “সেই দিন বেশি দূরে না। ইনশাল্লাহ, আমরা বাংলাদেশে করতে পারব”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। পাতাল ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই চলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আগামীতে পাতাল রেলও করতে পারব।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৫০টি ব্রডগেজ ও ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং ভারতীয় ঋণ সহায়তায় ১২০টি যাত্রীবাহী কোচ রেলওয়েতে সংযোজিত হচ্ছে। এরপর ঐ অনুষ্ঠান থেকেই রাজধানীর যানজট নিরসনে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ইউলুপ এবং হাতিরঝিল এলাকায় সাউথ ইউলুপ চালু করেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন এই ট্রেনটি আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নতুন এই ট্রেনটি শুধুমাত্র ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশনে থামবে।