জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমসহ দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজে ও ডিউজে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এই কথা বলেন। এসময় তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ঐ অপরাধীকে নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের ভাববার সময় এসেছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতিবছর রমজানে পেশাজীবি বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সাথে ইফতার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজে এবং ডিউজে কর্তৃক যৌথ আয়োজনের ইফতারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় টেবিলে-টেবিলে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত চক্রই যে গুপ্ত হত্যা ঘটাচ্ছে সেটি এখন প্রমাণিত। গণমাধ্যমকেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গুপ্তহত্যা চলছে। আমি বলেছিলাম তথ্য আছে। মাদারীপুরে শিক্ষককে হত্যাচেষ্টা থেকে এখন প্রমাণ হয়েছে। সেখানে জনগণ হাতেনাতে ধরেছে। এ ঘটনার পর কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। এরপর এভাবেই মানুষ ধরবে।’ এসময় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ও বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিককে হত্যার হুমকির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তারেক জিয়াকে ইঙ্গিত করে, তার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাকে আদর দিয়ে ব্রিটিশ সরকার বসিয়ে রেখেছে। ব্রিটিশ সরকার কেন তাকে আশ্রয় দিয়েছে জানি না। সে ওখানে যাওয়ার পর টিউলিপ হুমকি পাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’

শেখ হাসিনা বলেন, টিউলিপকে দেওয়া হুমকিতে বলা হয়েছে ‘তোর নানাকে হত্যা করেছি। তোকে আর তোর মা-খালাকেও হত্যা করবো।’ এই হলো হুমকির ভাষা। যে হুমকি শুনে বিএনপি নেত্রীর সেই ‘হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চাই’ হুমকির কথা মনে পড়ে যায়। হুমকি-ধামকির মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। যাদের চরিত্র মানুষ হত্যা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা ভোগ করার পর কিছু দায়িত্বও থাকে। সবার কাছ থেকে সেই দায়িত্বশীলতা আশা করি।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে বিবিসির একটি প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, ‘বিবিসিও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দিল, যার কোনো ভিত্তি ছিল না। বিবিসির মতো একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছ থেকে এটা কাম্য ছিল না। সেটাও ঘটেছে।’

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের সমালোচনা করবেন ঠিক আছে। কিন্তু সেটা যেন অসংলগ্ন না হয়। সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তবে স্বাধীনতা ভোগের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রতি যে দায়িত্ব রয়েছে সেটাও পালন করতে হবে। এছাড়াও, গণমাধ্যমকে গঠনমূলক সমালোচনার ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রবাহ ধরে রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি টেলিভিশন চালু করার সাহস কেউ পায়নি। তিনি সেটা করেছেন। এখন টক শো করেও অনেকের ভালো কামাই হচ্ছে। তবে টক শো সংসদের বিকল্প হতে পারে না। জাতীয় সংসদে কথা বলা হয় কতগুলো নিয়ম-নীতি ও বিধিবিধানের মধ্যে থেকে। আর টক শোতে বক্তব্য হয় লাগামছাড়া।

ইফতার অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাফর ওয়াজেদ, মহাসচিব ওমর ফারুক ও ডিইউজে’র সভাপতি শাবান মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিউজে’র সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় সাংবাদিক নেতারা নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবি তোলেন। তারা সাংবাদিকদের চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা এবং বয়স্ক সাংবাদিকদের জন্য সুবিধাজনক কর্মসংস্থানেরও দাবি করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে