ধর্মের নামে মানুষ হত্যাকারীদের কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তাদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এমন মত দেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। সারাদেশের একলাখ মুফতি, আলেম-ওলামা ও ইমামদের স্বাক্ষর নিয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী ফতোয়া প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এদের রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। গ্রেফতারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে স্বীকার করেছে ধর্মীয় চেতনা থেকেই এ ধরনের কাজ করছে তারা।শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জমিয়াতুল ওলামার পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদ ও আতঙ্ক সৃষ্টির এ কাজকে ধর্ম ও মানবতাবিরোধী বলে মন্তব্য করা হয়। অনেকে ধর্মের অপব্যাখ্যার কারণে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।

ফতোয়া প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। তিনি বলেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা বর্বর হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তারা শুধু ইসলামের শত্রুই নয়, মানবতারও শত্রু। কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি গোষ্ঠী হীনস্বার্থে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন মাসউদ।তিনি বলেন, বিপথগামীদের মানসিক অবস্থা ও চিন্তা চেতনার পরিবর্তন না করে শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। চলতি বছরের ৩ মে থেকে এ স্বাক্ষর সংগ্রহে কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে সংগঠনের চেয়ারম্যান জানান-ওআইসি, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হবে ফতোয়াগুলো।

জঙ্গিদের অনেকেই ‘জিহাদি’ বললেও তারা আসলে ‘সন্ত্রাসী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসলাম সন্ত্রাস সমর্থন করে না। আর যারা বেহেশত পাওয়ার আশায় আত্মঘাতী হামলা করছে, বলছে মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী, তারা কোরআন ও হাদিসের আলোকে বেহেশত পাবে না। তাদের স্থান নিশ্চিত দোজখে।’ ‘এমনকি ধর্মের নামে সন্ত্রাসকারী, জঙ্গি, গুপ্ত হত্যাকারীদের জানাজার নামাজ পড়াও হারাম। আর যারা এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মারা যাবে তারাই শহীদ হবেন।’

হেফাজতের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের লোকজন মিলেমিশে বাস করছি। মানুষ হিসেবে আমরা সবাই ভাইভাই। কিন্তু একটি গোষ্ঠী পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী ভাবধারার লেখা বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী। ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী মোকাবেলায় মসজিদের ইমামসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদীদের মনোবৈকল্য দূর করা ফতোয়া প্রকাশের উদ্দেশ্য। সন্ত্রাস ও জিহাদ যে এক জিনিস নয়, তা পবিত্র কোরআন, হাদিসের আলোকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরার উদ্দেশ্য ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের কর্তব্য হলো এসব দেখেশুনেও বোবা হয়ে শয়তানের মতো দাঁড়িয়ে না থাকা। জঙ্গিবাদী প্রতিরোধে পারলে হাতে, নইলে মুখে, আর একেবারে না পারলে অন্তর থেকে ঘৃণা করা।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাক্ষর সংগ্রহ কমিটির সদস্য মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইফী, মাওলানা আবদুর রহিম কাশেমী প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে