ঝিনাইদহের জোহান ড্রীম ভ্যালি পার্ক এ আজ শুরু হয়েছে ৪র্থ আন্তর্জাতিক ফোকলোর কনফারেন্স ২০১৯। বাংলাদেশ ফোকলোর গবেষণা কেন্দ্র, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; লৌকিক কলকাতা, ইন্ডিয়া; ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়;জেলা প্রশাসন, ঝিনাইদহ এবং ঝিনাইদহ পৌরসভার আয়োজনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরহাদ হোসেন এমপি।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের মাননীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাঃ সায়েদুর রাহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী  বিশ্ববিদ্যালয়ের এর সাবেক এমিরেটাস অধ্যাপক বরুনকুমার চক্রবর্তী। বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাইমস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এর মাননীয় ভিসি প্রফেসর ড. এ কে এম আক্তারুল ইসলাম। প্রথমে ঝিনাইদহ পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্তর থেকে আনন্দ শোভা যাত্রা শুরু হয়এ ড্রিম ভ্যালি পার্কে এসে শেষ হয়। এরপর জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ ফরহাদ হোসেন এমপি সেমিনার স্থলে এসে পৌছালে তাকে ফুল দিয়ে বরন করে নেয়া হয়। মূল আয়োজন শুরুর পূর্বে অতিথিবৃন্দ মঞ্চে আসন গ্রহন করেন। এরপর প্রধান অতিথি জনাব মোঃ ফরহাদ হোসেন এমপি অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন।

সেমিনারের শুরুতে স্বাগত ভাষণ রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাঃ সাইদুর রহমান। তিনি ৪র্থ আন্তর্জাতিক ফোকলোর কনফারেন্স ২০১৯ এর সার্বিক মঙ্গল কামনা করেন। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং  ৪র্থ আন্তর্জাতিক ফোকলোর কনফারেন্স এর আয়োজক ড. তপন কুমার রায়। তিনি তার বক্তব্যে ঝিনাইদহের জেলা প্রসাশক,পুলিশ সুপার, মেয়রসহ আয়োজক কমিটির সবাইকে এবং আমন্ত্রিত সকল অতিথিবৃন্দকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার জনাব মোঃ হাসানুজ্জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন ৪র্থ আন্তর্জাতিক ফোকলোর কনফারেন্স ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা ঝিনাইদহবাসীর জন্য গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, “এই সেমিনারে শিল্প, সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হবে যা থেকে আমরা লোক সাহিত্যের মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে পারব।তিনি বলেন আমাদের এই অঞ্চল লোক সাহিত্যে সমৃদ্ধ যা ৪র্থ আন্তর্জাতিক ফোকলোর সেমিনার আরও এর গুরত্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন লৌকিক কলকাতার সম্পাদক ড. কোয়েনা চক্রবর্তী। তিনি বলেন ভারতের নামী-দামী ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই আন্তর্জাতিক ফোকলোর কনফারেন্স-এ অংশগ্রহন করেছেযার কারনে এটি আক্ষরিক অর্থেই আন্তরজাতিক সেমিনারে পরিনত হয়েছে।ইউনিভার্সিটি অব নিউ ম্যক্সিকোর ফ্যাকাল্টি মেম্বার ডেমন জোসেফ মন্টেকুলার তার বিশেষ অতিথির ভাষনে বাংলাদেশের ভূয়ষী প্রসংশা করেন।তিনি বলেন মানুষ জন্মগত ভাবেই জ্ঞানী এবং মানুষের জ্ঞান চর্চার একটি অন্যতম শাখা হিসেবে লোক সাহিত্য চর্চাকে উল্লেখ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আখতার হোসেন তার বিশেষ অতিথির ভাষনে বলেন লোকসাহিত্য আমাদের সমাজ এবং মানুষের সাথে অতোপ্রোত ভাবে মিশে আছে। নিয়মিত লোকসাহিত্য চর্চা করার গুরুত্ত তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার জনাব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন সময়ের ব্যবধানে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে।তিনি বলেন, রবীন্দ্র- লালনের গানের সুর ও লয়ের যেমন আধুনিকায়ন হয়েছে ঠিক তেমনি লোকসাহিত্যও অনেক এগিয়েছে। তিনি তিনি তরুণ সমাজকে মাদক্মুক্ত উন্নত দেশ ও জাতি গড়ার আহবান জানান।

বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে টাইমস ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড এ এইচ এম আক্তারুল ইসলাম বলেন, লোকসাহিত্য আমাদেরকে লাভ এন্ড ইক্যুইটির শিক্ষা দেয়। লালন সাই, পাগলা কানাই, পাঞ্জু শাহ এদের গানে লোক সাহিত্য প্রানবন্ত ভাবে উঠে এসেছে।যদিও তাদের মধ্যে অনেকে শুশিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না।এরপর প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রফেসর এমিরেটাস বরুনকুমার চক্রবর্তী। তিনি তার বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে ভারতকে সদেশ এবং বাংলাদেশকে তার ২য় বাসস্থান বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন মানব মন্দির হল শ্রেষ্ঠ মন্দির। এই মানব মন্দিরকে ভালোবাসলেই বিজয় আসবে।

এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ ফরহাদ হোসেন এমপি। তিনি এই আন্তর্জাতিক ফোকলোর কনফারেন্স-এ তাকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, এমন আন্তজার্তিক মানের সেমিনার করা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারনে। তিনি জাতির পিতার কথা স্মরণ করে বলেন,এই সোনার বাংলার রুপকার ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজুবুর রহমান যার লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, লোক সাহিত্যের সৌন্দর্য তার বৈচিত্রে। তার নানা ধারা আর এই ধারার ভিতরেই লুকিয়ে আছে তার গোপন রহস্য। সময়ের প্রয়োজনে যদি ভাবের পরিবর্তন না করা যায় তাহলে লোক সাহিত্যের মৃত্যু ঘটবে।  লোক সাহিত্য কোন একজন ব্যক্তির নয় এটা দিনে দিনে মানুষের মুখ থেকে কালের বিবর্তনে  আজ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। নানা বোধ আর ভাবের মিলনে লোক সাহিত্য হয়ে উঠেছে অনন্য।

এছাড়াও উক্ত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত জনাব নলিনী বেরা,কথা সাহিত্যিক, পশ্চিমবঙ্গ। প্রফেসর বেলা দাস, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়,আসাম, ইন্ডিয়া। প্রফেসর ড রজত কুমার দে, গৌরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়,ভারত। ড কোয়েল চক্রবর্তী, সম্পাদক, লৌকিক, ভারত; ডেমন জোসেফ মন্টিকুলার, ফ্যাকাল্টি মেম্বার, কলা ও ইতিহাস বিভাগ, নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা। মোঃ হাসাউজ্জামান,পুলিশ সুপার,ঝিনাইদাহ, মোঃ সায়েদুল করিম মিন্টু, পৌর মেয়র,ঝিনাইদহ । উক্ত সেমিনারে ধন্যবাদ বক্তব্য পেশ করেন প্রফেসর ড. মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, চেয়ারম্যান,ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন , সহযোগী অধ্যাপক ,বাংলা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সারোজ কুমার নাথ, জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ।

শামস -ই- তানভীর
নিউজ ডেস্ক ।।
 বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে