রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সকল শান্তিরক্ষীদের প্রতি বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা বজায় রাখার উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি আজ এখানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি শান্তিকামী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন, বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন এবং বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করবেন ও কর্মের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করবেন-এই প্রত্যাশা করছি।’ আব্দুল হামিদ বলেন, জাতিসংঘ মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবস্থানকে সুসংহত করেছে এবং একই সাথে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের দৃপ্ত অংশগ্রহণ বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের কারিগরী উন্নয়নের সাথে সাথে জাতিসংঘ মিশনে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীদেরকেও উন্নত টেকনোলজি সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে দিকে বিশেষ খেয়াল রেখে বাংলাদেশ সরকার সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর শান্তিরক্ষীদেরকে আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার, মাইন প্রটেক্টেড ভ্যাসেল, আনম্যানড এরিয়াল ভ্যাসের সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি দ্বারা সজ্জিত করে জাতিসংঘ মিশনে প্রেরণ করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী দিবসে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা গর্বভরে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে সর্বাধিক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মধ্যে অন্যতম হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছে। আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী তাদের মহিলা শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে চলেছে জেনে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ বর্তমানে মহিলা প্রতিনিধিত্বের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে। বাংলাদেশও এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চ পর্যায়ের নিযুক্তিতে আমাদের মহিলা শান্তিরক্ষীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আমাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, অনুকরণীয় দক্ষতা প্রদর্শন করে বিশ্বের অন্যান্য সহযোগী শান্তিরক্ষীদের শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। একই সাথে দায়িত্ব পালনকালে শান্তি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ঐ সকল দেশের জনগণের অকুন্ঠ ভালোবাসা অর্জন করেছেন।
মিশন এলাকার জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও আপনাদের উন্নত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের মান সর্বদা প্রশংসা বয়ে এনেছে। জাতিসংঘ এবং বিশ্বের সকল শান্তিপ্রিয় দেশ আপনাদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এছাড়াও, আপনারা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন. আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। আপনারা জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের প্রতিটি দুর্যোগে, দুর্দিনে ও প্রয়োজনে দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রেখে অর্জন করেছেন জনগণের অবিচল আস্থা ও অপরিসীম ভালোবাসা। তিনি দৃঢ় আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশমাতৃকার যে কোন প্রয়োজনে সহায়তা করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৪টি ইউএন মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। এই মুহূর্তে ১৩ টি মিশনে নিয়োজিত আছে। মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র এবং সুদান এর দারফুরে কর্মরত ইউএন মিশনে আমাদের একজন করে দুইজন মেজর জেনারেল পদবির ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার নিযুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও মালি, আইভোরিকোষ্ট এবং কঙ্গোতে আমাদের সেক্টর কমান্ডার নিয়োজিত রয়েছেন। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ সদর দপ্তর এবং শান্তিরক্ষা মিশনসমূহে উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে আমাদের সামরিক অফিসারদেরকে নিযুক্তি প্রদানের জন্য আরও কিছু প্রস্তাবনা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল ও বলিষ্ঠ কূটনৈতিক এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টারই ফল।
রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কর্মরত অবস্থায় শহীদ ১৩০ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ডাব্লিউ ওয়াটকিন্স ও সেনা প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।