বার্ষিক বনভোজনে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর অভিযোগে উঠেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের একটি মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাশ বর্জন, স্কুল ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানানোসহ ক্ষোভ ও উত্তেজনায় স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী। এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।

জানা যায়, গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) উপজেলার ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাজীপুরের সাফারি পার্কে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করেন। স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বনভোজনে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ২২ জন শিক্ষার্থী ছিল।

হিন্দু শিক্ষার্থীরা জানান, বনভোজনে দুপুর বেলার খাবার হিসেবে গরুর মাংসের আয়োজন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কোনো খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। আগে থেকে তাদের বিষয়টা জানানোও হয়নি। হিন্দু শিক্ষার্থীরা খাওয়ার পর জানতে পারে তাদেরকে গরুর মাংস খাওয়ানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, ‘গাজীপুরের সাফারি পার্কে পিকনিকে যাওয়ার জন্য আমরা ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। আমাদেরকে গরুর মাংস খাওয়ানোর কথা প্রধান শিক্ষক স্যারকে জানালে তিনি বলেন, ‘একদিন খেলে কিছু হবে না, খাবি না তো আসলি কেন?’ পরে বিষয়টি আমাদের অভিভাবকদের অবহিত করি। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে আমরা ক্লাশ বর্জন করেছি। এ ছাড়া এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে।

উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সরন দত্ত বলেন, ‘পিকনিকে যদি হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খেতে দেওয়া হয় তাহলে ঠিক হয়নি। শুনেছি প্রধান শিক্ষক হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করেননি। এতে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উত্তেজিত এলাকাবাসী বিদ্যালয় ঘেরাও করে এর প্রতিবাদ করেছে।’ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাহেরুল ইসলাম তোতা বলেন,বিষয়টির সুষ্ঠু সুরাহা করতে ইউএনও, ওসিসহ এলাকার লোকজন নিয়ে একটি জরুরি মিটিং করার আয়োজন চলছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘পিকনিকে নিয়ে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর ঘটনা ঘটে থাকলে, তাহলে অবশ্যই ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এখন বিদ্যালয় এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’ ফলদা রামসুন্দর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল বনভোজনে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গরুর মাংস খাওয়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি এলাকায় উত্তেজনার কথার স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল বসা হবে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ঝোটন চন্দ বলেন, সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কে এম মিঠু
টাঙ্গাইল ।। বিডি টাইম্‌স নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে