ধান, নদী, খাল—এই তিনে বরিশাল। বরিশালে অসংখ্য খাল আছে, আছে ছোট-বড় অনেক নদী। সেই নদী আর খালের জেলা বরিশালে ট্রেন চলবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। এটি খুবই আনন্দের কথা। কেবল বরিশাল বা টাঙ্গাইল নয়। দেশের প্রতিটি জেলাকেই রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা প্রয়োজন। রেলওয়ে সবচেয়ে সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন। নদী-পাহাড় কোনো সমস্যা নয়। আমরা যদি পদ্মা ও যমুনার ওপর দিয়ে রেললাইন নিতে পারি, তাহলে অন্যান্য নদীর ওপর দিয়েও সেটি সম্ভব। আসলে রেলওয়ের উন্নয়নে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। ব্রিটিশরা আসামের দুর্গম পাহাড় কেটে রেললাইন তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের তিন পাহাড়ি জেলার পাহাড়গুলো তার চেয়ে অনেক ছোটে। সকলেরই আশা অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাও রেলওয়ে নেটওয়ার্কে চলে আসবে। সরকারের যতগুলো মন্ত্রণালয় আছে, সবচেয়ে ধনী মন্ত্রণালয় হলো রেলপথ। সারাদেশে রেলওয়ের যে বিপুল সম্পদ আছে, সেটি কাজে লাগাতে পারলে গোটা দেশকে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনা কঠিন নয়।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু দিয়ে একই সময় গাড়ি ও ট্রেন চলাচল করবে। এ ছাড়া পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প এবং ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল রুটে ট্রেন চলাচল করবে। বরিশাল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য রেলওয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা থেকে বরিশাল, বরিশাল পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ও কো-অপারেশন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।’
রেলওয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী কেবল বরিশাল নয়, প্রস্তাবিত পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যেতে চান। সে ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের গোটা দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। নিরুপায় ওই অঞ্চলের মানুষ এখন ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও লঞ্চেই চলাচল করে থাকে।
এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বরিশাল থেকে ঢাকায় এসে চাকুরি করা কয়েকজন জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানায় লাখো মানুষ। তাদের স্বপ্ন ঢাকা থেকে ট্রেন পদ্মা সেতু পেরিয়ে বরিশাল হয়ে পায়রা পর্যন্ত যাবে। রেলওয়ে নেটওয়ার্কে আসবে তিন পাহাড়িজেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের ভেতরে যোগাযোগ ব্যবস্থারই উন্নয়ন ঘটবে না, বাংলাদেশ যুক্ত হবে এশীয় মহাসড়ক ও রেলযোগাযোগ নেটওয়ার্কে। তখন চট্টগ্রামে প্রাতরাশ সেরে দুপুরে ইয়াঙ্গুনে ভোজের কথা চিন্তা করতে পারবে আমাদের জনগন। রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সহজে দূরকে নিকট ও পরকে আপন করতে পারে। একদিন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে এমনই দিনের অপেক্ষায় সারাদেশবাসী।
রেলওয়ে রক্ষায় ৩১ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত রেল রক্ষা অভিযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছে সিপিবি ও বাসদ। নেতারা মনে করেন, রেলের লোকসানের জন্য দায়ী ভুলনীতি, লুটপাট ও দুর্নীতি। সঠিক নীতি ও ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই, ভাড়া কমিয়েও রেলকে গতিশীল করা সম্ভব। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরিশালে ট্রেন চলবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচ্চাশা হলেও অসম্ভব নয়। আমাদের প্রত্যাশা, অদূর ভবিষ্যতে বরিশালে ট্রেন চলবে। সব ব্যর্থতা পেছনে ফেলে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঘুরে দাঁড়াবে।