বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে আজ ঢাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে আজই তার দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশের পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মারুফ হোসেন সরদার বিডি টাইম্স নিউজকে জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যেবেলা ঢাকার খিলখেত এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
সম্প্রতি মি. চৌধুরীকে নিয়ে খবর বেরোয় যে তিনি সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে ইসরায়েলি লিকুদ পার্টির এক নেতার সাথে বৈঠক করেছেন – যাকে ‘মোসাদ-সংশ্লিষ্ট’ বলে উল্লেখ করে বিভিন্ন সংবাদপত্র। এর পরই তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে মি. চৌধুরীর সাথে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার বৈঠকের অভিযোগ আসার পর তারা তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ খবর নিশ্চিত করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে বিএনপির নবনিযুক্ত যুম্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে কিছু সংবাদ প্রচারিত হয়। যেখানে বলা হয়, মি. চৌধুরী ভারতে গিয়ে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এস সাফাদির সাথে বৈঠক করেছেন।
এসব প্রতিবেদনের সাথে কিছু ছবিও সংযুক্ত ছিল যেগুলোতে মি. সাফাদির সাথে হাস্যোজ্জ্বল আসলাম চৌধুরীকে দেখা যায়। মি. সাফাদির ফেসবুক পাতায়ও এধরণের কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যেই মি. চৌধুরী ইসরায়েলি এই নেতার সাথে বৈঠক করেছেন। এসব প্রতিবেদনে মি. সাফাদি ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা, মোসাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বলেও উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে কিছু টেলিভিশন চ্যানেল এবং পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে আসলাম চৌধুরী দাবী করেন, তার ঐ সফরটি ছিল ব্যক্তিগত এবং মি. সাফাদি যে লিকুদ পার্টির নেতা সেটি তিনি জানতেন না।
রোববার এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা এখনি বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করবেন না। দলীয়ভাবে আলোচনা করে তারা এনিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছিলেন যে ভারতে মি. চৌধুরীর ঐ সফরটি ছিল ব্যক্তিগত এবং ইসরায়েলের সাথে বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই।
মেন্দি এন সাফাদির ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি নিজেকে একটি কূটনৈতিক যোগাযোগ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় তিনি ইসরায়েল-ভারত সম্পর্ক বিষয়ে ভারতে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে গঠিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসলাম চৌধুরী যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে তিনি ২০০৮ সালে তার নিজ এলাকা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু থেকে বিএনপির মনোয়নে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
বাংলাদেশ ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কূটনৈতিক কোন সম্পর্কও রাখেনি। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি নেতার সাথে ইসরায়েলি রাজনীতিকের বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত করে ঢাকায় ফিলিস্তিনী দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইউসেফ রামাদেন মন্তব্যও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক দলটির জন্য হবে ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’।