বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকদেরকে উৎসাহ-সান্ত্বনা দিয়ে মালিকগণ পার করছেন মহান মে দিবস, নেই নিরাপদ কর্মস্থল, নেই উপযোগী মজুরি, নেই সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর “শ্রমিক আইনের” সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন। আর সেই সুযোগ নিচ্ছে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, শ্রমিকদেরকে নিয়ে আলোচনা সভা ও র‌্যালির মধ্যেই আটকে আছে মে-দিবস।

সরকারের কাছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (এনজিডব্লিউএফ)-এর নয় দফা দাবি জানায় মে দিবসে শ্রমিকরা, গার্মেন্টস সেক্টরে নিরাপদ কর্মস্থল, জীবন-যাপন উপযোগী মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করাসহ নয় দফা দাবি জানানো হয়েছে। বিজিএমইএ, কারখানা মালিক, বায়ার এবং সরকারের কাছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন (এনজিডব্লিউএফ) এ দাবি জানায়।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতীকি অবস্থান থেকে এ দাবি জানানো হয়। বিশ্ব পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টসের নিহত শ্রমিকদের সন্তান, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তরা এ প্রতীকি অবস্থানে অংশ নেন।

এনজিডব্লিউএফ-এর সভাপতি আমিরুল হক্ আমিন বলেন, ‘৯৯০ সালে সারাকা গার্মেন্টস থেকে শুরু করে রানা প্লাজা পর্যন্ত এ সেক্টরে দুইশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। মারা গেছে কয়েক হাজার শ্রমিক। আর যাতে কাউকে জীবন দিতে না হয় সে জন্য একটি গার্মেন্টস কারখানাও অনিরাপদ রাখা যাবে না। প্রয়োজনে পথে ঘাটে গজিয়ে উঠা অনিরাপদ কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে। সরকার রপ্তানী আয় দ্বিগুন করার যে স্বপ্ন দেখছে তা বাস্তবায়ন করতে চাইলে অব্যশই গার্মন্টস সেক্টরকে নিরাপদ কর্মস্থল হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে।

তাদের নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১ নিরাপদ কর্মস্থল, জীবন-যাপন উপযোগী মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা      এবং ইউনিয়ন গঠনে ছাঁটাই নির্যাতনসহ সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা।

২ রানা প্লাজা ও তাজরীন গার্মেন্টসে শ্রমিক হত্যায় দায়ীদের উপযুক্ত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক          শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৩ আহত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ফলোআপ চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আর কোনো রানা প্লাজা-তাজরীনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য বায়ার, বিজিএমইএ, মালিক,    সরকার, শ্রমিক সংগঠনসহ সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

৪ শ্রমিকদের জন্য শহরতলীর খাস জমিতে স্বল্প ব্যয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক কলোনি তৈরি করতে          হবে।

৫ জাতীয় বাজেটে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা, সরকারি হাসপাতাল, নিরাপদ          মাতৃত্ব কেন্দ্র, শিশু লালন কেন্দ্র ও বাসস্থান নির্মাণের জন্য সুস্পষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে।

৬ সরকারি সেক্টরের মতো বেসরকারি সেক্টরে এবং গার্মেন্টসেও মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস ঘোষণা    করতে হবে।

৭ ব্যবসা, মুনাফা, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শ্রমিকদের জীবনকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে।

৮ সব কারখানায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস, ফ্যান, বিশুদ্ধ খাবার পানি, ওয়াশরুম, ক্যান্টিন নিশ্চিত      করতে হবে।

এনজিডব্লিউএফ-এর সভাপতি আমিরুল হক্ আমিনের সভাপতিত্বে ফেডারেশনের সাধারণ   সম্পাদক সাফিয়া পারভীন, মো. ফারুক খান ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে