আবারো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হলেন কাজী সালাউদ্দিন। কামরুল আশরাফ খানকে ৩৩ ভোটে হারিয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৩৪ জন ডেলিগেটসের মধ্যে ৮৩ জনেরই সমর্থন পান বাংলাদেশের এই ফুটবল কিংবদন্তি। এদিকে সহ সভাপতি ও সদস্য পদেও সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীদের ছিল জয় জয়কার। সহ-সভাপতি পদের তিনটি ও সদস্য পদের ১৩ জনই নির্বাচিত হয়েছেন এই পরিষদ থেকে।
টানা দু’বার সভাপতি নির্বাচিত হলেও কাজী সালাউদ্দিনের এবারের লড়াইটা ছিল ভিন্ন মাত্রা। বিগত দিনের ব্যর্থতার সাথে প্রতিপক্ষের হুঙ্কারে অনেকেই ভেবেছিলেন সালাউদ্দিন অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
পরিস্থিতি প্রতিকুলে,হলেও কাউন্সিলররা ছিলেন অনুকূলে। যেখানে ৫০টি ভোট প্রতিপক্ষ টেনে নিতে সক্ষম হলেও, সালাউদ্দিনের ব্যালট নম্বরে পরেছে ৮৩টি সিল। আর তাতে কিনা বাফুফে’র সভাপতির পদটি টানা তৃতীয়বারের মতো অলঙ্কৃত হয়েছে বাংলাদেশের এই ফুটবল কিংবদন্তীর হাত ধরে।
এদিকে, সালাউদ্দিনের মতো অতোটা চ্যালেঞ্জ ছিল না তার প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থীদের। তাই ৪ জনের মধ্য থেকে ৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন খুব সহজেই। বাকি একজন খুবই অল্প ব্যবধানে হারলেও কাউন্সিলরদের ম্যান্ডেট পেয়েছেন স্বতন্ত্র সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদের মতো সদস্য পদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। ১৫ জনের মধ্য থেকে বিজয়মাল্য পড়েছেন ১৩ জনই।
এদিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনে সদস্য পদেও জয়জয়কার কাজী সালাউদ্দিনের প্যানেলের। ১৫ সদস্যের ১৩ জনই সম্মিলিত পরিষদ প্যানেলের। সর্বোচ্চ ১১৪ ভোট পেয়েছেন শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর। এর পরেই ১০৫ ভোট নিয়ে পেয়েছেন আমিরুল ইসলাম বাবু।
এছাড়া বাফুফের নব-নির্বাচিত প্যানেলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে- হারুনুর রশিদ পেয়েছেন ৯৪ ভোট। সম্মিলিত পরিষদের ইলিয়াস হোসেন ও সত্যজিৎ দাস রূপু পেয়েছেন ৮৫টি করে ভোট করে। ৮৪টি ভোট পেয়েছেন সাবেক ফুটবলার ও বাঁচাও ফুটবলের প্রার্থী বিজন বড়ুয়া। সমান সংখ্যক ভোট পেয়েছেন সালাউদ্দিন প্যানেলের মোহাম্মদ ইকবাল।
এছাড়া ৮৩ ভোট নিয়ে ১৫ সদস্যের এই প্যানেলে আছেন ফজলুর রহমান বাবুল। আরিফ হোসেন মুন পেয়েছেন ৮২ ভোট। ৮১ ভোট পেয়েছেন অমিত খান শুভ্র ও জাকির হোসেন চৌধুরী। এছাড়া, ৭৮ ভোট পেয়েছেন মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম। ৭০টি ভোট পেয়েছেন আবদুর রহিম। এরপর ৬৮টি করে ভোট পেয়ে নির্বাচিত এই প্যানেলে সদস্য হিসেবে জায়গা পেয়েছেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম ও মাহফুজা আক্তার কিরণ।
এদিকে, বাঁচাও ফুটবল পরিষদের নানা অভিযোগ সত্ত্বেও বাফুফের বাৎসরিক সভা বা এ.জি.এম. সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নব নির্বাচিত সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০১৬ সালের খসড়া বাজেট ধার্য করা হয়েছে ৪০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে, ২০১১ সালে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মধ্যকার প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের সময় নেয়া ঋণ এখনো পরিশোধ না হওয়া বিষয়ে, নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন সালাউদ্দিন।
নির্বাচনের দিন প্রথম ধাপে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিম নিয়ে কানাঘুষা কম চলেনি। ২০১৫ সালের আয় ব্যয়ের হিসাব ও ২০১৬ সালের বাজেটের খসড়া অনুমোদিত হয় এজিম অনুষ্ঠানে। ২০১৫ সালে বাফুফের আয় হয় ৩০ কোটি ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫৭ টাকা। অন্যদিকে, ব্যয় হয় ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮১ টাকা। অর্থাৎ, আয়ের চেয়ে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২৪ টাকা ব্যয় বেশি হয়। এবারের বাজেটের আয়-ব্যয়ের খসড়া বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ আরো বড়। ৭ কোটি টাকা।
তবে, সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ৫ বছর আগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মধ্যকার এক ঐতিহাসিক ম্যাচ। সে ম্যাচ আয়োজনে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে বাফুফের নেয়া ১০ কোটি টাকার মধ্যে, এখনো পরিশোধ হয়নি ৮ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ।
তবে, এতো সব অভিযোগের মাঝেও এবারের এজিএমকে এককথায় নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেন কাজী সালাউদ্দিন। আর্থিক স্বচ্ছতা ও ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়া সালাউদ্দিনের সামনে এবারের বাজেটকে আরো বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।